“মোর বয়স তখন ১৮ কি ২০ বছর হবি, দেশত তখন গোলাগুলি শুরু হইছে। তখন একজনক কহিনু কি হইছে, ওঁয় কহিল দেশটা পাকিস্থানীরা দখল করিবার জন্যে বাংলাদেশের মানুষগুলাক মারেছে, যখন শুনিনু হামার দেশটা পাকিস্থানের মানুষ দখল করি নিবি! তখন আর ঠিক থাকিবা পারনি। বাড়ির কোন লোকক না কহি চলি গেইনু যুদ্ধত। কিন্তু বাফু কি পানু মুই ? দেশ স্বাধীনের পর কত ঝনে কত কি পাইল, আর মোর নামটা এখনো মুক্তিযোদ্ধার তালিকাত উঠিল নাই।” মুক্তিযুদ্ধের কথা জিজ্ঞাসা করতেই মনের ক্ষোভে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এভাবেই স্থানীয় ভাষায় বীড় বীড় করে কথাগুলো বলেন, বিরলের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা সেবাস্তিয়ান মাড্ডী(৬৫)।
অন্যের বাড়িতে মজুরের কাজ করে সংসার চালালে ও প্রতি বছর ডিসেম্বরে বিজয়ের অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে দাঁড়িয়ে থাকে, বাস্তবের শত কষ্টের মাঝেও সে বিজয়ের অনুষ্ঠান দেখে স্বস্তি পায় সে। একান্ত সাক্ষাতকারের এক পর্যায়ে সেবাস্তিয়ান ম্াড্ডী জানান, ৭১-এ দেশ স্বাধীনের দৃঢ় শপথ নিয়ে পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায় সে। মা-বাবাকে জানালে হয়ত যুদ্ধে যেতে দেবেনা ভেবে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেয় সে। বিরলের বেতুড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে পায়ে হেঁটে ৭ নং সেক্টরের সাব সেক্টর শীববাড়ী ক্যাম্পের আওতায় যুদ্ধ শুরু করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা জর্জভাই, যহোন, রাফায়েল ও পিযুসের সহযোদ্ধা হিসেবে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় সেবাস্তিয়ান মাড্ডী। অথচ তাদের সকলের নাম তালিকা ভুক্ত হয়েছে। যুদ্ধ শেষে বিজয়ের পতাকা হাতে সেবাস্তিয়ান বাড়ী ফিরে, সাথে নিয়ে আসেন ক্যাপ্টেন ঈদ্রিস স্বাক্ষরিত এক খন্ড কাগজ। প্রথম প্রথম তাকে বিজয় দিবস সহ বিভিন্ন দিবস গুলিতে আমন্ত্রন জানানো হলে ও এখন আর কেউ তার খোঁজ খবর নেয়না।
মাঝে মাঝে একাত্তরে স্মৃতি আওড়াঁতে পলিথিনে মোড়ানো কাগজের টুকরোটি বের করে দেখে সে। এটি তার কাছে কোন সাধারণ কাগজ নয়। তাই নিজের শোয়ার ঘরের বালিশের নিচে যত্ন করে রাখে কাগজটি। তবে মরার আগে মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকায় নিজ নামটি দেখে যেতে পারলে নিজের জীবনকে ধন্য মনে করত সেবাস্তিয়ান মাড্ডী। এ ব্যাপারে বিরল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী জানান, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় বাদপড়া অবশ্যই দুঃখজনক। সেবাস্থিয়ান সহ বিরলের প্রায় ২২৩ জন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে আবেদন করেছিল, যাচাই-বাচাই করে প্রতিবেদন দানের জন্য প্রায় ২ মাস আগে নথি পাঠিয়েছে। আমরা কমিটি গঠন করেছি। যাছাই-বাছাইয়ের পর প্রতিবেন পাঠাব।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/সংকেত চৌধুরী/দিনাজপুর