রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইনসহ মিয়ানমারের কয়েক হাজার বিদ্রোহী বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়ে এদেশের স্বার্থ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে । এদের অনেকেরই রয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী মর্যাদা। জাতিসংঘের আরবান রিফিউজি স্ট্যাটাস নিয়ে এরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে । এরফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে ঝুঁকির মুখে।
সংশিষ্ট সূত্রসমূহ জানায়, মিয়ানমারের সাধারণ শরণার্থী ছাড়াও কয়েক হাজার বিদ্রোহী বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে অবস্থান করে এদেশের স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম ছাড়াও রয়েছে রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর লোক। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী প্রচারণা, অস্ত্র চোরাচালান, চুরি-ডাকাতি-খুন রাহাজানি ও নারী-শিশু পাচারের মত জঘন্যতম কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। এরাই রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসনে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। এদের মধ্যে অন্তত ৩শত বিদ্রোহীকে আরবান রিফিউজির সনদপত্র দিয়েছে বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন। এই সনদপত্র নিয়ে এরা বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। এরা কোথায় অবস্থান করে তা বাংলাদেশ যেমন জানে না, তেমনি জানে না ইউএনএইচসিআরও। এদের বিরুদ্ধে বিদেশের চর হয়ে কাজ করারও অভিযোগ আছে। র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে এই ধরনের অসংখ্য আরবান রিফিউজি অস্ত্র চোরাচালান, ডাকাতিসহ দেশ বিরোধী নানা তৎপরতায় জড়িত থাকার দায়ে ধরা পড়েছে। তবে এরা গ্রেফতার হলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর কর্মকর্তারা তদবির করে এদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান বলে জানায় পুলিশের একাধিক সূত্র।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের শরণার্থী বিষয়ক আইনে এখনও স্বাক্ষর করেনি। তবে এই সংস’ার সদস্য হওয়ার কারণে এদের আইন মেনে নিতে হয়। এই আইন অনুযায়ী কোন শরণার্থী নিজদেশে ফিরতে না চাইলে তাকে জোর করে নিজদেশে কিংবা অন্যকোন দেশে জোর করে ফেরত পাঠানো যায় না। আবার এরা শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান না করে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় এদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করা যাচ্ছে না। এই সুযোগে অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী অস্ত্র চোরাচালানসহ বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছে।
সূত্রসমূহ জানায়, মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযানের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে অস্ত্র-প্রশিক্ষণ এবং সদস্য সংগ্রহের মত কর্মসূচী না থাকলেও কয়েকটি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে এখনও প্রচুর সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়ে গেছে বলে ধারণা করছে সংশিষ্টরা। যার কারণে পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ী থেকে মাঝেমধ্যে ভারি অস্ত্র উদ্ধার হয়। এসব বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে আরএসওর’ এককালের কমান্ডার নাজমুল ১৪ মাঝিমালা হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গা-ঢাকা দিয়ে আছে। ২০০৪ সালের অক্টোবরে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের পর তাকে ধরার জন্য পুলিশ হন্য হয়ে খুঁজছে। এই বাহিনী ছাড়াও আরো কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অস্ত্র-গুদামে হানা দিয়ে বিডিআর ও সেনা সদস্যরা বিপুল সংখ্যক যুদ্ধাস্ত্র উদ্ধার করে বিভিন্ন সময়। টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে অস্ত্রের চালান আনার সময় র্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে অনেক রাখাইন বিদ্রোহী।
সূত্র আরো জানায়, বিগত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মিয়ানমার সরকার সেদেশের আরাকান রাজ্যে (বর্তমান নাম রাখাইন এস্টেট) বাঁধ নির্মাণ করার সিদ্ধান- নিলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রাখাইন বিদ্রোহীরা বার্মিজ ও ইংরেজী ভাষায় লিফলেট ছাপিয়ে, ওয়েব সাইট খুলে এবং সাময়িকী বের করে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ফলে মিয়ানমার সরকার এদের চাপের মুখে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স’াপন থেকে সরে আসে। শুধু তাই নয়, একই কারণে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের ৫০ হাজার একর ভুমি ব্যবহারের চুক্তি থেকেও সরে আসে তারা। স্থবির হয়ে পড়ে মিয়ানমার-বাংলাদেশ মৈত্রী সড়ক নির্মাণের কাজ।
সীমান্ত এলাকার স্থায়ী অধিবাসীদের অভিযোগ, এসব বিদ্রোহী বাংলাদেশে অবস্থান করে মিয়ানমারে গুজবের মাধ্যমে আতংক ছড়িয়ে এদেশে শরণার্থী নিয়ে আসছে। জাতিসংঘের ক্রীড়নক হয়ে তাদের স্বার্থ বাস-বায়নের মাধ্যমে এরা বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এরপরও পুলিশ কিংবা অন্যকোন সংস্থা জাতিসংঘের চাপে এদেরকে ধরার সাহস পাচ্ছে না।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আরবান রিফিউজিরা সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে এদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। ইউএনএইচসিআর এর উচৎ এই ধরনের শরণার্থীদের একটি তালিকা পুলিশের কাছে দেওয়া। অন্যথায় তারা দেশের স্বার্থ বিরোধী কোন তৎপরতায় লিপ্ত থাকলে তাদেরকে আটক করা কঠিন হয়ে পড়বে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, এদের চলাফেরা সীমিত করে দেওয়া উচিৎ। এদের জন্য নির্দিষ্ট শরণার্থী ক্যাম্প থাকা উচিৎ।
তিনি বলেন, এই ধরনের বিভিন্ন শরণার্থী হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্নস্থানে চাকরী করছে। তাদেরকে আমরা চাকরীচ্যুত করতে বলেছি। এদের উপর নজরদারি না থাকলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কামাল আজাদ/কক্সবাজার