বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা) এর আওতাভুক্ত প্রান্তিক কৃষকদের নামের বরাদ্দকৃত ঋনের টাকা তাদেরকে না দিয়ে স্বল্প সুদে মডেল কৃষক নাম দিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে মোটা অংকে ঋণ প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রান্তিক কৃষকরা এই টাকা না পেয়ে তাদের ভবিষ্যৎ স্বাবলম্বি হওয়ার আশা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এই সকল ঋণগ্রহিতারা অর্থ উত্তোলন করলেও এখন পর্যন্ত কেউ কোন গাভী ক্রয় না করারও অভিযোগ উঠেছে।
মিল্কভিটা কার্যালয় এবং প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত স্বল্পসুদে ঋণপ্রদানের কার্যক্রম চলছে। অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা নিজেরা আর্থিক ভাবে লাভ বান হওয়ার জন্য প্রান্তিক কৃষকদের নাম বাদ দিয়ে মডেল কৃষক তৈরি করতে হবে, এই নাম উল্লেখ করে মোটা অংকের টাকা ঋণ গ্রহন করছে। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর স্থানীয় প্রাথমিক দুগ্ধ সমিতির সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির দুজন পরিচালক সহ তাদের নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের নামে এই টাকা প্রদান করা হয়েছে।
শরিষাকোল প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবলা অভিযোগ করে বলেন, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা তাদের নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তাদের নিজ নাম সহ আত্মীয় স্বজনদের নামে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে। অথচ এই ঋনের টাকা স্বল্প সুদে প্রানি-ক কৃষকদের দেয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রতিজন কৃষককে গাভী ক্রয়ের জন্য ৭৫ হাজার টাকা প্রান্তিক কৃষকরা সবাই গাভীও ক্রয় করলেও এরা কেহই কোন প্রকার গাভী গ্রহন করেনি। ঋন গ্রহিতার মধ্যে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা সাবেক পরিচালক খলিল সরকার, সুবীর ঘোষ, গোলজার হোসেন, নুরু মন্ডল সহ সবাই সভাপতি ও সহ-সভাপতির পছন্দর লোকজন এবং আত্মীয় স্বজন। এ ছাড়াও ব্যবস্থাপনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সফিকুর রহমান, বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসিব খান তরুনের স্ত্রী এলিজা খানের নামেও ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। যদি এই টাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের এবং ধনীদেরকে না দিয়ে সকল সমিতির সদস্যদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হতো তাহলে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি সহ প্রান্তিক কৃষকরা সবচেয়ে বেশী লাভবান হতো। এখানে মুষ্টিমেয় ধনী শ্রেণীর লোকজন আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। এই টাকা তারা গাভী না কিনে অন্য ব্যবসায় মূলধন হিসেবে ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে এই টাকা ফেরত পরিশোধ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
নাম প্রকাশ করার না শর্তে কয়েকজন ঋণ গ্রহিতা জানান, যাদের সর্বনিন্ম ১০ টি করে গাভী আছে তাদেরকে এই ঋণ দেয়া হয়েছে। এই টাকার সঙ্গে নিজেদের আরও আড়াই লাখ টাকা যোগ করে একটি আদর্শ খামারের জন্য ঘর উত্তোলনের জন্য বলা হয়েছে। কিন্ত বর্তমানে গো-খাদ্যর মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক কৃষক ঋণগ্রস্থ। সে কারনে নতুন করে গাভী না কিনে কিছুটা হলেও আমাদের সাহায্য হবে। দুধের মূল্যে থেকে এই টাকা পরিশোধ করে দেয়া হবে। দুধের উৎপাদন না বাড়লেও কৃষকরা কিছুটা উপকৃত হবে এই আর কি।
এ বিষয়ে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপক (সমিতি) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ব্যবস্থাপনা কমিটি যেভাবে তালিকা অনুমোদন দিয়েছে সে ভাবেই আমরা ঋণ বন্টন করেছি। প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিতরনকৃত গাভী ঋণের টাকা আদায় হওয়ার পর অন্যদেরকে দেয়া হবে। মডেল কৃষক নামে যে ঋণ চালু করা হয়েছে এটিও প্রান্তিক কৃষকদের অংশ বিশেষ।
এ বিষয়ে মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ হাসিব খান তরুন জানান, এই টাকা ঘূর্ণায়মান তহবিল। ২৪ মাসের মধ্যে কিস্তিতে সাড়ে সাত লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরবর্তিতে এই টাকা অন্যদেরকে মডেল কৃষক হিসেবে উদ্বুদ্ধ করার জন্য দেয়া হবে। একজন মডেল কৃষক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং আত্মীয়ও হতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। তকে ঋণ প্রদান করা যাবে না এমন কোন নিষেধ নেই। তাছাড়া প্রান্তিক কৃষকদের ঋণের কার্যক্রমও চালু রয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর মিল্কভিটার ব্যবস্থানা কমিটির মাসিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের আলোচনার প্রেক্ষিতে মডেল কৃষক তৈরির লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে মিল্কভিটার বিভিন্ন প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতিতে মডেল কৃষক ঋণগ্রহিতা প্রতিজনকে সাড়ে সাত লাখ টাকা করে ঋণ প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত ১১ জন সদস্যর মধ্যে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। মোট ৩০ জনের মধ্যে এই টাকা প্রদান করা হবে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/সুজন সরকার/সিরাজগঞ্জ