শাহরিয়ার সিফাত, টাঙ্গাইল থেকে
‘মা শুধু পেটে রাখছিল লালন পালনতো করেই নাই ঠিক মত দুধও খাওয়ায় নাই। জীবনে আমি মায়ের আদর পাই নাই। মনে অয় আমার জন্য মার দরদ নাই। মায়া থাকলে কি আর আমারে থুইয়া চইলা যাইত।’ কথাগুলো কষ্ট ভারাক্রান- মনে একদমে বলে ফেললেন ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডে লিপি ইলেক্ট্রনিক্স এর কর্মরত ৯ বছরের শিশু হারুন-অর-রশিদ। হারুনের বাড়ী ঘাটাইল উপজেলার কাতরা গ্রামে। পিতার নাম আব্দুল মোতালেব।
জানা যায়, হারুনের বয়স যখন ২ বছর তখন আব্দুল মোতালেব হারুনের গর্ভধারিনী মা হাজুরিকে তালাক দেন। স্বামী পরিত্যাক্তা নিরুপায় হাজার কষ্ট বুকে চাপা রেখে শিশু সন-ান হারুনকে রেখে বাপের বাড়ী চলে যান। মা যখন হারুনকে রেখে যান তখন মার বুকের দুধই ছিল তার একমাত্র খাদ্য। বাড়তি খাবার হিসেবে কোন খাবার খেতে শুরু করেনি। এমতাবস’ায় হারুনের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নেয় ওর দুর সম্পর্কের এক নানি।
মায়ের আদর বঞ্চিত হারুন অনাদরে অবহেলায় সেখানে বেড়ে উঠতে থাকে। ৮ বছর পর ফিরে আসে দাদার বাড়ী ঘাটাইল উপজেলার কাতরা গ্রামে। আব্দুল মোতালেব তিনটি বিয়ে করে। হারুনের মা হাজুরি হচ্ছে তার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী শমলার ঘরে তিন কন্যা সন-ানসহ মোতালেবের ছয় সদস্যের জোরাতালীর সংসার। পিতৃ পরিচয় প্রতিষ্ঠায় অভাবী পরিবারে আশ্রয় নেয় হারুন। সময়মত দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটেনা হারুনের ভাগ্যে। এক বেলা পেটপুরে খাওয়ার জন্য সারা দিন ছুটা ছুটি করে বেড়াত। কোন দিন ভাগ্যে জুটতো আবার কোন দিন চলে যেত অনাহারে। খুধার তারনায় গাছের মরা ডাল ভেঙ্গে ও পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করত হারুন।
হারুনের জীবন যাপনে করুন চিত্র অবগত হয়ে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডের লিপি ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক লুৎফর রহমান তালুকদার তার ভরন পোষনের দায়িত্ব নেন। তার দোকানে সহযোগী হিসেবে ইলেক্ট্রনিক্সের কাজের প্রশিক্ষনের পাশাপাশি লেখাপড়া শিখিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। লুৎফর রহমান তালুকদারের এই উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মহল্লাবাসী।