সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল তানতাওয়ারির ভাষণের বিষয়বস্তু গতরাতে যখন তাহরির স্কোয়ারে আসতে শুরু করে, সন্তুষ্ট হওয়ার বদলে নতুন করে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ৻

`ইনহাল` `ইনহাল` অর্থাৎ চলে যাও ক্ষমতা ছাড়ো শ্লোগান তুলতে শুরু করে মানুষ৻ সেনাপ্রধানের সাথে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারাকের তুলনা করে শ্লোগান দিতে থাকে৻

জুলাই মাসের ভেতর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে বেসামরিক প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, সোনাবাহিনীর রাজনৈতিক অভিপ্রায় নেই – এইসব বক্তব্যে আস্থা রাখেনি তাহরির স্কোয়ারের বিক্ষোভকারীরা৻ ফলে বাড়ি ফিরে যাবার জন্য সেনাপ্রধানের আহ্বান অগ্রাহ্য করেছেন তারা৻

তাহরির স্কোয়ারে সালওয়া ইমাম নামে এক ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেনাপ্রধান এখন রক্তক্ষয়ী একটি সংঘর্ষ চাইছেন৻ খবর : বিবিসি

“আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি তার এই বক্তব্যের পর অনেক রক্ত ঝরবে৻ আমি তাকে বলতে চাই, সম্মানিত সেনাপ্রধান, আমরা চেয়েছিলাম আপনি আমাদের বলবেন যে বন্দীদের মুক্ত করা হবে, বিক্ষোভে আহত লোকজনের চিকিৎসা করা হবে, এবং শিঘ্রি সাংবিধানিক আদালতের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে৻ আপনি তা বলেন নি৻ ফলে এখন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হবে৻“

তাহরির স্কোয়ার জুড়ে এ ধরনের ক্ষোভের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে৻

কায়রো থেকে বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানাচ্ছেন বুধবার সকাল থেকেই থেমে থেমেই নিরাপত্তা রক্ষীদের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ চলছে৻

নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে, অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা জবাব দিচ্ছে পাথর এবং পেট্রল বোমা দিয়ে৻

আহতদের মোটর সাইকেলে করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৻ তাহরির স্কোয়ারে যারা স্যূভেনির বিক্রি করেন, তারা এখন বিক্রি করছেন সার্জিকাল মাস্ক বা মুখোশ, যাতে মানুষজন কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে পারে৻

আন্দোলনের বৈপ্লবিক চোহারা

কায়রো থেকে বিবিসির সংবাদাদাতা জন লাইন বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে বর্তমান এই আন্দোলনের বৈপ্লবিক চেহারাটা আরো স্পষ্ট৻

তিনি বলেন, মিশরের মানুষজন চাইছে রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীর প্রভাব খসে পড়ুক৻ এমনকি কট্টর ইসলামপন্থি মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা দুদিন আগে তাহরির স্কোয়ারে এলে, তাকে লক্ষ্য করে কটুক্তি, শ্লোগান হয়েছে৻

তবে একইসাথে এটাও সত্যি যে জানুয়ারিতে আন্দোলনের সময় যে ঐক্য ছিল এখন তা আর অতটা নেই৻

বিভিন্ন গোষ্ঠি একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে৻ তাদের মধ্যে মতের অমিলও স্পষ্ট৻ যেমন, মুসলিম ব্রাদারহুড চাইছে সোমবারের সংসদ নির্বাচন সময়মতই হোক৻ অনেকে এটাকে একটা ফাঁদ হিসেবে দেখছে৻

অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ফিল্ড মার্শাল তানতাওয়ি মিশরীয়দের মধ্যে পরস্পরের প্রতি এই অবিশ্বাস, বিভেদ, সন্দেহকে আরো উস্কে দিতে চেয়েছেন৻

আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এই বিক্ষোভকারীদের ওপর যাতে যথেচ্ছ দমনপীড়ন চালানো বন্ধ করা হয়, সে জন্যও মিশরের সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে৻

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে৻

শনিবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছে।

তাহরির স্কয়ারে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কায়রো ছাড়াও আরও কয়েকটি শহরে ছড়িয়েছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here