ইমা এলিস/ বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::
বিশ্বখ্যাত জাদূশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল আইচ বলেছেন, মানুষ স্বপ্নের সমান বড়, আশার সমান সুখী আর কাজের সমান সফল। বিখ্যাত মানুষ দেখলেই সেলফোনে ছবি তোলার পরিবর্তে উল্লিখিত তিনটি অনুশীলন দ্বারা বরং নিজেই বিখ্যাত হওয়ার দিকে আমাদের সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। স্থানীয় সময় শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) শো টাইম মিউজিকের আয়োজনে ও বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় জামাইকাস্থ ‘দ্যা ম্যারি লুইস একাডেমি’তে অনুষ্ঠিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বই মেলায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
সকাল এগারোটায় উদ্বোধনের কথা থাকলেও তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে বিকেল তিনটে থেকে শুরু হয়ে রাত বারোটা পর্যন্ত একটানা অনুষ্ঠান চলে। সম্মেলন উদ্বোধনের জন্য আগের দিন রাতেই নিউ ইয়র্ক এসে পৌঁছেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু। ড. নুরুন নবী প্রধান অতিথি এবং বেলাল বেগ, কৌশিক আহমেদ, জুয়েল আইচ, লুৎফর রহমান রিটন, জিনাত নবী, ফরহাদ হোসেন ও মাজহারুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন।
ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি ও মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরে ঝাঁক ধরে মেলায় অংশ নিয়ে মেলায় হিমু পরিবেশ সৃষ্টি করে। এমনকি ছোট ছোট শিশু কিশোররাও হলুদ পোশাকে সেজে গুজে মুলমঞ্চে চিত্রাংকণ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ফারজিন রাকিবা, ডা. আইনুন নাহার রলি চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা দেখাশোনা করেন।
নেলী ইসলাম, ছন্দা সুলতান ও শাহীন দিলওয়ারের সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতা ও ছড়ার আসর বসে। এবিএম সালেহ উদ্দিন পরিচালনা করেন বই পরিচিতির আসর।
লেখক হুমায়ুন আহমেদ: আমার ভালো লাগা পরিচালনা করেন মাকসুদা আহমেদ। সহযোগিতায় ছিলেন নেলী ইসলাম। বেনজির সিকদার রচিত পুঁথি পাঠ করেন মৃদুল আহমেদ।
রাইটার্স ক্লাবের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব খালেদ সরফুদ্দিন। ‘হুমায়ুন সাহিত্যের সৌরভ’ শীর্ষক আলচনায় অংশ নেন কৌশিক আহমেদ, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও ড. নুরুন নবী। সঞ্চালনা করেন মনজুর কাদের। শিশু কিশোদের অংশগ্রহণে ‘আমাদের প্রজন্ম আমাদের অহঙ্কার’ সঞ্চালনা করেন আবু সাইদ রতন।
হুমায়ূন আহমেদের শিশুতোষ গল্প পাঠ ‘গল্পে গল্পে হুমায়ুন’ পর্বে গল্পদিদিমনি সাবিনা নিরু শিশুদের সাথে গল্পের আসর জমান। শিশুদের মাঝে পুরস্কারবিতরন করেন লুৎফর রহমান রিটন, জুয়েল আইচ, কৌশিক আহমেদ, ড. নুরুন নবী ও পূরবী বসু। আবৃত্তির অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জি এইচ আরজু। ‘গীতিকার হুমায়ুন আহমেদ’ বিষয়ে আলোচনা করেন বেলাল বেগ। সঞ্চালনা করেন শাহ ফিরোজ। মুমু আনসারী ও নাহরীন ইসলামের যুগল কন্ঠ ‘জাগো বাহে কুনঠে সবাইকে চমৎকৃত করেছে। ফরিদা ইয়াসমিন ও শামীম আরা বেগমের তত্বাবধানে ও মার্জিয়া স্মৃতির কোরিওগ্রাফিতে বাফার ক্ষুদে শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা প্রশংসা কুড়িয়েছে। ‘হুমায়ুন ঘনিষ্ঠদের স্মৃতিচারন’ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাজহারুল ইসলাম। অংশ নেন পুরবী বসু, লুৎফর রহমান রিটন, ফরহাদ হোসেন ও জুয়েল আইচ। এই পর্বে জুয়েল আইচের চমৎকার কথা ও যাদূতে দর্শকবৃন্দ বিমোহিত হন।
সঙ্গীত পরিবেশন করেন চিত্রা রোজারিও, লিয়ানা মানহা, বাঁধন, তাসকিনুল হক। কৃষ্ণা তিথি, সেলিম চৌধুরী ও এস আই টুটুল। যুগলবন্দি করেন শান্তনু সাজ্জাদ ও ডা. আইনুন নাহার রলি। মেলায় নালন্দা, রাইটার্স ক্লাব যুক্তরাষ্ট্র, সময় প্রকাশন, অন্য প্রকাশ, পঞ্চায়েত, ছড়াটে সহ বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্হা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ গ্রহণ
শনিবার দিনভর বৃষ্টি আর প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে বই মেলায়। গেল বছরও হুমায়ুন সম্মেলনের দিনও এমনি বৃষ্টিপাত ছিলো, সে কথাও ভোলেননি আগত দর্শকশ্রোতারা।
এবারের মেলার প্রধান আর্কষন ছিলেন যাদু শিল্পী জুয়েল আইচের যাদু। রাত ১১টা অবধি তার সাথে প্যানেল আলোচনায় ছিলেন ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, পূরবী বসু ও মাজহারুল ইসলাম। গুণী ব্যক্তিত্ব জুয়েল আইচ তার গুরু গম্ভীর বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে শ্রোতাদের কিছুটা হালকা করার জন্য যাদু দেখাচ্ছিলেন। আলোচনার শুরুতেই হল ভর্তি মানুষকে মনস্তাত্ত্বিক বক্তব্য দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যান। এরপর হুমায়ূন আহমেদের সাথে দীর্ঘ স্মৃতি চারণ করেন। এবারের মেলা ছিল উল্লেখ করার মতো। প্রবাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত অধিকাংশ মানুষই উপস্থিত ছিলেন মেলায়।
হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আর্ন্তজাতিক বাংলা বইমেলায় জাদুকর জুয়েল আইচ হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারন বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়ে ওঠেন দর্শকশ্রোতারা। তিনি হুমায়ূন আহমেদের ১৪ লাউ ও রশি লাগানো ৭ বোতল ওয়াইনের অজানা গল্প শুনিয়েছেন। তুলে ধরেছেন, ৪২ রকমের মাছ দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ কিংবা ডিনার করানোর স্মৃতি। একটি দেয়ালের ব্যবধানে তাদের বাস হলেও বেলকুনিতে নানা খুনশুটির গল্পের শেষ নেই। এমনই নানা স্মৃতিচারন নিয়ে জুয়েল আইচ ঘন্টাব্যাপী হুমায়ুনের কথা বলছিলেন। মানবিকতা ও সরলতায় কালজয়ী পাঠকপ্রিয় লেখকের কথা বলতে বলতে তিনি আবেগ প্রবন হয়ে উঠছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে টেনে আনছিলেন অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর কথাও। যাদুকর অভিনেতা জুয়েল আইচ ফরিদীকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অভিনেতা হিসেবে অবিহিত করেন।