এসএস মিঠু , জয়পুরহাট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।’
রবিবার জয়পুরহাটে এক বিশাল জনসভায় এ কথা বলার পাশাপাশি শেখ হাসিনা সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ,যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতিবাজদের মদদদানকারীদের পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান,তাদের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকতে জয়পুরহাটের জনগণের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন,‘যত বাধাই আসুক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই সম্পন্ন করা হবে। এজন্য তিনি দেশবাসীর সহযোগীতাও কামনা করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক এটা বাংলাদেশের জনগণ এবং যুবসমাজের প্রাণের দাবি। একাত্তরের ঘাতক গোলাম আজম গংদের যখন বিচার কাজ শুরু হয়েছে,তখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। বিএনপি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।’
জয়পুরহাট সার্কিট হাউজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রীর অসহযোগীতামূলক রাজনীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন,‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের সম্পদ লুটপাট করে। পাঁচ বছর তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের কি উন্নয়ন করেছে। জনসভায় হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন,‘ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশে যখন শান্তি, তখন অশান্তির আগুনে জ্বলছেন খালেদা জিয়া। কারণ তিনি দেশের মানুষের ভালো চান না,চান শুধু দেশের অর্থ-সম্পদ লুটেপুটে খেতে। তাইতো তার দুই সন্তান দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে। আর যার স্বাক্ষী দিয়েছে বিদেশীরা। তিনি বলেন,‘দেশের জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। সন্ত্রাস,বোমাবাজি ও জঙ্গিবাদ বন্ধ করার দাবি করে তিনি বলেন,‘একসময় জয়পুরহাট জঙ্গির ঘাঁটি হলেও এখন জয়পুরহাটের মানুষ শান্তিতে আছে।
তিনি বলেন,‘দেশের গরীব ছেলে মেয়েদের পড়ালিখা নিশ্চিত করতে শিক্ষা ট্রাষ্ট চালু করা হয়েছে। যেখানে এক হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়েছে। গরীব ও মেধাবীরা সেই টাকা থেকে যেন লিখাপড়া করতে পারে তার ব্যবস’া নেয়া হয়েছে।
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন,‘এখন নির্বাচনও হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ‘আমরা মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানুষ ভোট দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল পাচ্ছে। নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই,ব্যালট বাক্স ছিনতাই,ফলাফল পাল্টে দেওয়ার কোন ঘটনা এখন আর নেই।
প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নে তাঁর সারা জীবন উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়ে বলেন,‘দেশের জনগণের জন্য আমার বাবা মা জীবন দিয়ে গেছেন। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে, মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনে আমিও আমার বাবার মত নিজের জীবন উৎসর্গ করব।’এ সময় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধন-সম্পদ নয় দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করারও আহবান জানান।
জয়পুরহাটবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে মেডিক্যাল কলেজ এর ঘোষণাসহ ২৫দফা দাবি দাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমার কাছে কোন দাবি করতে হবে না। আমি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জায়গায় গেছি। কাজেই কোথায় কি প্রয়োজন তা সময় মতই বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তিনি এ সময় এসব দাবি দাওয়ার ব্যাপারে আগামীতে বাস্তবায়ন করার আশ্বাস প্রদান করেন।
জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যডভোকেট সামছুল আলম দুদু’র সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এস এম সোলায়মান আলীর পরিচালনায় জনসভায় আরো বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুল জলিল,মোঃ নাসিম কেন্দ্রীয় আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, স’ানীয় নারী সাংসদ মাহফুজা মন্ডল রিনা,মাহিন মনোয়ারা হকসহ জেলা ও থানা আ’লীগের নেতৃবৃন্দ। এ সময় মঞ্চে উপসি’ত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আঃ লতিফ বিশ্বাস, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল্ ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল ইসলাম টুকু প্রমূখ।
রবিবার সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী জয়পুরহাটে পৌঁছান। প্রথমে তিনি ২৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন করা দেশের একমাত্র খনি, খনিজ ও ধাতব বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান “ইনস্টিটিউট অব মাইনিং মিনারোলজি এন্ড মেটালার্জি’র উদ্বোধন করেন। এরপর ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দের যুব উন্নয়ন কমপ্লেক্স, ১৮কোটি ৭লাখ ৪৫ হাজার টাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত,দেড় কোটি টাকার মুক্তিযোদ্বা কমপ্লেক্স ও সাড়ে ৭ কোটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভিত্তি স’াপন করেন। এরপর বেলা দেড়টায় সার্কিট হাউজে জেলার উন্নয়ন নিয়ে জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।