ডেস্ক নিউজ :: দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু মানবাধিকার পরিস্থিতির সন্তোষজনক অগ্রগতি ঘটেনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উদযাপনে উপেলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বেসরকারি গবেষণা সংগঠন ‘ভয়েস’ ঢাকাস্থ এনজিও বিষয়ক ব্যুরো মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ এবং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ রাশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন খ্যাতিমান সাংবাদিক মুক্তপ্রকাশ-এর সেক্রেটারি সেলিম সামাদ, পেন ইন্টারনাশনাল বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ড. সৈয়দা আইরিন জামান, ব্র্যাক বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার, নারী অধিকার কর্মী মুশফিকা লাইজু প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভয়েসের গবেষণা সহযোগী আফতাব খান শাওন।তিনি বলেন, মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি রয়েছে আশ্রয় পাওয়ার অধিকার, শোষণ বঞ্চনা ও নির্যাতন থেকে মুক্তির অধিকার, বাকস্বাধীনতার অধিকার এবং শিক্ষার অধিকার।
সেলিম সামাদ বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের সবচেয়ে অপরিহার্য মানবাধিকার। এটা আমাদের সেই অধিকার যা কোন মিডিয়া বা ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে নির্বিশেষে কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই অবাধে মতামত প্রদান করা এবং আমাদের চিন্তাধারণা প্রকাশ করার অধিকার দেয়।কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির উপরে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বলয় ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে।সমাজ থেকে আমাদের মানবাধিকার লংঘনের সূত্রপাত।মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই সমাজ থেকে সকল অনধিকার চর্চা, অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার দূর করে সমধিকার স্থাপন করতে হবে।এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে।
পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খালিকুজ্জমান বলেন, করোনা মহামারীর সময়ে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে, যা নিরসনে সরকারের আরো জোরদার কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার। এবং একে।সত্রে সমাজের প্রভাবশালী শ্রেণীরও কর্তব্য রয়েছে। তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ অর্জনে সবার একত্রে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধান অতিথি মোঃ রাশেদুল ইসলাম বলেন যে, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বিভিন্ন দেশ একযোগে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নের ওপর কাজ করতে হবে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য, তাদেরকে নিজ দেশে পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। সরকার এনজিওদের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে এবং তাদের জীবনমানের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুশফিকা লাইজু বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে করোনা সময়ে। মানুষের মূল্যবোধের পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনসহ মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব। তিনি সরকারকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহবান করেন।
ড. আইরিন জামান বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই সমাজ থেকে সকল অনধিকার চর্চা, অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার দূর করে সমধিকার স্থাপন করতে হবে।এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে।
সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্টের এবং নাগরিকের অধিকার কোনভাবেই খর্বিত করা যাবে না।দেশের অর্থনীতি, বাজেট ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা ক্ষেত্র ইত্যাদি সকল বিষয়ে একজন নাগরিককে অবগত থাকতে হবে। এবং নাগরিকেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, দলিত শ্রেণীর প্র্রতিনিধি মনি রাণী দাস, নাগরিক উদ্যাগের নাদিরা পারভীন, সংগঠক বদরুল আলম, সুমনা মাসুদ, জায়েদ সিদ্দিকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ।