ডেস্ক রিপোর্ট:: বৈশাখের কাঠফাটা রোদ্দুরে বেশ ক্লান্ত শহুরে জীবন। দুপুরে তপ্ত সূর্য যখন মাঝ আকাশে আসে, সে সময় মনে হয় রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। এরই মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তপ্ত রোদে ঘামে শরীর ভিজে ফের সেই রোদেই ঘাম শুকাচ্ছে ফুটপাতের দোকানিদের।
অসহনীয় এ গরমের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে রাস্তার ফুটপাতের এসব দোকানি এবং খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের ওপর। কাঠফাটা রোদ ও ভ্যাপসা গরমে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে চলছে তাদের জীবন। অসহনীয় গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ তাদের, তবুও জীবিকার তাগিদের নির্বিকার তারা।
অসহনীয় গরম আর দাবদাহে বিমর্ষ এখন প্রাণ-প্রকৃতি। তাপদাহের মাঝে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউই। আর এর মধ্যেও সকাল থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত এসব ফুটপাতের দোকানিরা দাঁড়িয়ে থাকছেন খোলা আকাশের নিচে। বাইরে মানুষ কম থাকায় তাদের আয়ও কমেছে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত জীবন, কিন্তু এর মধ্যেই ফুটপাতে তপ্ত সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।
দুপুরের ঝলসানো রোদে মহাখালীতে রাস্তার পাশের ফুটপাতে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই কয়েকদিনের রোদে শরীর শুধু পুড়েছে ও জ্বলেছে। প্রতিনিয়ত ঘেমে সেই ঘাম আবার সেই রোদেই শুকিয়েছে। কিন্তু অবসরের কোনো সুযোগ নেই। আমরা শ্রমজীবী মানুষ, দিন এনে দিন খাওয়ার অবস্থা। যে কারণে রোদ ও তীব্র গরমের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে এভাবে ফুটপাতে দোকানদারি করতে হয়।
মধ্য বাড্ডার ফুটপাতে তেতে ওঠা গরমের মধ্যে কিছু ফল ডালিতে সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় হাবিবুর মিয়া। তিনি বলেন, গরমে রাস্তায় মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তাই বিক্রি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের এই রোদের মধ্যেই কাজ করে যেতে হয়, পেটের তাগিদে। সবাই তো বুঝছে কেমন গরম এখন। কিন্তু এই কাঠফাটা রোদের মধ্যেও ফুটপাতে আমাদের মতো দোকানিরা বসে আছে ক্রেতার অপেক্ষায়।
বৈশাখের শুরু থেকেই তেমন একটা মেঘের আধিক্য নেই। আছে সূর্যের চোখ রাঙানি। প্রখর রোদকে সঙ্গী করে সকাল শুরু হচ্ছে। ভরদুপুরে তেতে উঠছে সূর্য। শেষ বিকালেও যেন রোদের তেজ কমছে না। তাইতো রোদ-গরম থেকে বাঁচতে কেউ মাথায় দিয়েছে ছাতা, কেউ বা গামছা, আবার অনেকে কোনো কিছু ছাড়াই এই জ্বলন্ত সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে দোকানদারি করছেন।
বাদাম বিক্রেতা এরশাদ আলী, ঘেমে জবুথুবু। তবুও একটা ঠেলা গাড়িতে বাদাম ও ছোলাবুটসহ অন্যান্য জিনিস নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ফুটপাত দিয়ে। আলাপকালে তিনি বলেন, গরমের যেমন জ্বালা আছে, পেটেরও তেমনি জ্বালা আছে। গরমে ঘেমে যাচ্ছি, কষ্ট হচ্ছে… এসব তো ভাবলে আমাদের চলবে না। যতই গরম হোক, রোদ হোক, বৃষ্টি হোক… এগুলো বিক্রি করলে তবেই আমার সংসার চলবে।
তিনি আরও বলেন, গরম লাগে, কষ্ট হয়, ঘেমে যাই, আবার ঘাম শুকায়। তবুও দোকানদারি না করে উপায় নেই। অন্যদের যেমন গরম লাগছে, শরীর জ্বলছে, তেমনি আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তারপরও এখানে বেচাকেনা করেই চলছে আমাদের জীবন। তাই গরমের মধ্যেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে এভাবেই আমাদের কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে, সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। যা আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আবহাওয়ার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া, বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।