Momin Mahadiমোমিন মেহেদী::

মানুষ মানে নতুন আলো/ ভালোর সাথে থাকা/ অন্ধকারের বিরুদ্ধে রোজ জনতাকে ডাকা/ তাই দিচ্ছি ডাক আজকে/ শুনতে যদি পাও/ জলদি করো লড়তে হবে/ তৈরি হয়ে নাও…

সম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও পরমানু বিজ্ঞানী এপিজে আবুল কালাম; তিনি বিদায় নিলেও আমাদের জন্য নিবেদন করে গেছেন নিরন্তর পাথেয়। তিনি লিখেছেন, বলেছেন আর কাজ করে গেছেন নতুন প্রজন্মে জন্য। তার প্রকাশিত সেই অসংখ্য কাজের ভীড়ে দু’একটা পঙতি তুলে ধরছি- ‘যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট করতে হবে।’ কাজের মানুষদের সংখ্য কখনোই অনেক বেশি ছিলো না। যে কারনে নীতি-আদর্শকে সামনে নিয়ে এগিয়েছেন এপিজে আবদুল কালামের মত তিল তিল করে ওঠা সাহসমানুষেরা। যে কারনে তিনি লিখতে পেরেছেন, ‘যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না; তাদের অর্জন অন্তঃসারশূন্য, উৎসাহহীন সাফল্য চারদিকে তিক্ততার উদ্ভব ঘটায়।’ লিখেছেন, ‘ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে, অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হতে হবে। তরম্নণ প্রজন্মের প্রতি এই আমার বার্তা।’

এপিজে আবদুল কালাম যেই নতুন প্রজন্মের জন্য নিবেদন করেছেন; সেই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই গুলিবিদ্ধ হবে বাংলাদেশে; তা হয় তো তিনি কল্পনাও করেন নি। কল্পনা করেনি ইতিহাসও। যে কারনে পৃথিবীর কোন ইতহাস, কোন তথ্য থেকে উঠে আসে নি মায়ের গর্ভে সন্তানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার রেকর্ড। পৃথিবীময় নেক্কারজনক এই ঘটনার জন্য সমালোচিত হচ্ছে বাংলাদেশ। যেভাবে সমালোচিত হয়েছিলো রড়্গী বাহিনীর কারনে; সমালোচিত হয়েছিলো পঁচাত্তরে, সমালোচিত হয়েছিলো আশিতে এবং নব্বইতে। এর আগে রাষ্ট্রপতিদেরকে হত্যার রেকর্ড ছিলো; আর এবার এক্কেবারে মায়ের গর্ভে সন্তানকে গুলি করার মত জঘণ্য কাজটি করেছে ছাত্রলীগের বদলে যুবলীগের নেতা। যা অবশ্য স্বাধীনতার চেতনা ব্যবসা যারা করছে; তাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো অতিতের মত। যেমন আমরা যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যাকান্ডের ঘটনা দেখেছিলাম। এবার গণমাধ্যমে দেখলাম যুবলীগ নেতার গুলিতে মাতৃগর্ভে থাকা সন্তানের গায়ে গুলি লাগার ঘটনা। কি নির্মম মানের রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পেশী শক্তি আর অর্থ শক্তির দিক থেকে স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠের দাবীদ্বার আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-শিবির-ইসলামী ঐক্যজোট(একাংশ)’র নেতাকর্মীরা। এই সকল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর রাজনীতি করছে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্র শিবির এবং যুবলীগ-যুবদল-জামায়াত। যাদের দলীয় চলন-বলন আলাদা হলেও ড়্গমতার অপব্যবহার একই রকম করে। যেমন একটি ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এভাবে-‘বেবি অব নাজমা বেগম। নাম রাখা হয়নি শিশুটির। যে শিশু মাতৃগর্ভে থাকাবস্থাতেই শিকার হয়েছিলো আমাদের রাজনৈতিক পশুদের নগ্ন হামলার। মাগুরায় আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে একজন নিহত এবং এক নারীর গর্ভে থাকা সনত্মান গুলিবিদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে দেয়া হয়েছে যে, জনগনকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে দিনের পর দিন ক্ষমতায় থাকার নীল নকশা এঁকেছে। যদি তাই না হবে; তাহলে কেন সারাদেশে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের হাতে। শুধুমাত্র আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২৩ জুলাই বিকালে মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ায় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী কামরম্নল ভূঁইয়ার সঙ্গে সাবেক যুবলীগকর্মী মহম্মদ আলী ও আজিবরের সমর্থকদের সংঘর্ষের মত করে সারাদেশে সহিংসতার রাজনীতিতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত। এই দলগুলোকে ‘না’ বলতে তৈরি জনগন; শুধু এখন প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা। আর সেই ঐক্যবদ্ধতা মৌলিক ৫ টি অধিকার রড়্গার জন্য। কোন সিংহাসন দখলের জন্য নয়।

আবার ফিরে আসছি সেই ঘটনায়; যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো মাতৃগর্ভে থাকা অনাগত শিশুটি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই রাতেই মাগুরায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমার গুলিবিদ্ধ শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। দুই দিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এই দৃশ্যটির আগের দৃশ্যটি ছিলো, আওয়ামী লীগের যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের সময় একপক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন গুলিবিদ্ধ নাজমার দেবর কামরম্নল। গর্ভস্থ সনত্মান গুলিবিদ্ধ হওয়ার এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অবশ্য এখন বলা হচ্ছে যে, ‘মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতকটি এখন হাসপাতালের ‘ভিভিআইপি’ রোগী। ওই নবজাতককে বাঁচাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের একাধিক বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা সাতদিন যাবৎ প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে শিশুটিকে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনদিন আগে অস্ত্রোপচারের পর থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় সব ওষুধে তার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা পালাক্রমে চিকিৎসকরা শিশুটির প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখছেন বলে জানা গেছে। শিশুটিকে শনিবার বেশি পরিমাণে মায়ের বুকের দুধ খেতে দেয়া হয়েছে। আগের দিন তাকে প্রতিবার ২ মিলিগ্রাম করে দেয়া হলেও শনিবার ৫ মিলিগ্রাম করে দুধ খাওয়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হলেও এখনো সে শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানান ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি। ঠিক গুলিবিদ্ধ এই শিশুটির মত আহত আমরা; আহত আমাদের বাংলাদেশ। ছটফট করছে বাংলাদেশের দেহ; অবসাদ-অবসন্ন হয়ে আসছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কিন্তু এভাবে বাংলাদেশকে-বাংলাদেশের রাজনীতিকে চলতে দেয়া যায় না; আজ খুব প্রয়োজন; জেগে উঠুক জনগন। যাতে করে ষোল কোটি মানুষ স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে এগিয়ে যেতে পারে প্রত্যয়ের সাথে। তাদের দু’বেলা দু’ মুঠো ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা ব্যবস্থা যেন থাকে নিরাপদ-নিরপত্তার মধ্য দিয়ে। এজন্য অবশ্য সেই মানুষদেরকে এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশকে ভালোবেসে-বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে। যাদের মধ্যে এই ভালোবাসা নেই তারাই করছে খুন-গুম আর সন্ত্রাসের রাজনীতি; তারাই চালাচ্ছে দেশ। অথচ দেশে স্বাধীনতা অর্জনের আগে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়েছিলো অর্থনৈতিক মুক্তির মূল লড়্গ্য থেকে। সেই লড়্গ্য থেকে সরে এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তৈরি সরকার এখন জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি তো দিতে পারছেই না। বরং জীবন কেড়ে নিচ্ছে। এই জীবন কেড়ে নেয়ার রাজনীতিকে প্রতিহত করতে তৈরি হওয়ার সময় এখন নতুন প্রজন্মের…

মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here