ঝিনাইদহে  স্বামী ও সতীনের নির্যাতনের শিকার হয়ে অগ্নিদদ্ধ মাজেদা (২৭) দীর্ঘ ৯ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। গত ২৩ জানুয়ারি হত্যার উদ্দেশ্যে গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে  আগুন ধরিয়ে দেয় পাষন্ড স্বামী শহিদুল ও সতীন চম্পা ।

ঝিনাইদহ সদর থানা সুত্রে জানা যায় , ঝিনাইদহ শহরের অদুরে হলিধানী বাজারে ছোট্র একটি খুপড়ি ঘর ভাড়া করে প্রায় ৭ বছর আগে থেকে বসবাস করে আসছিল মাজেদা। জীবনের সাথে পাল্লা দিয়ে খাবারের ব্যবসা করে জীবন যাপন করে আসছিল সে। ব্যবসা চালানোর এক পর্যায়ে জেলার সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের রিক্সাচালক শহিদুলের সাথে পরিচয় হয় তার । তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এক পর্যায়ে মাজেদাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় শহিদুল। মাজেদাও শহিদুলের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত ১ বছর আগে বিয়ে করে তারা । খাবারের ব্যবসা করে মাজেদা কিছু সোনার গহনা তৈরি করেছিল। শহিদুল তার চাতুরতার কৌশলে গহনাগুলো হাতিয়ে নেয় এবং প্রাইভেট কার কেনার নাম করে মাজেদার কাছে নগদ ৫০,০০০ টাকা দাবী করে। টাকা দিতে না পারায় বিভিন্ন সময়ে মারধর করে ও মেরে ফেলার হুমকী দেয়।এর পরও নিজের সর্বস্ব দিয়েও শেষ রক্ষা হলনা মাজেদার ।

গত ২৩ জানুয়ারি গভীর রাতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে, আগুন ধরিয়ে স্বামী শহিদুল ও সতীন চম্পা মেরে ফেলার চেষ্টা  করে। ঐ রাতেই তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় সদর হাসপাতের কর্তব্যরত ডাক্তার মাজেদাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে রেফার্ড করে। স্থানীয়  মানবিধাকার  সংস্থার কর্মীরা ভিকটিম মাজেদার উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৩ জানুয়ারী  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করে। এরপর ৯ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গত বৃহষ্পতিবার  রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মাজেদা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাজেদা কুড়িগ্রামের পলাশবাড়ি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। ছোটকালেই বাবাকে হারিয়ে কুড়িগ্রাম এলাকার এমিতখানায় বড় হয়েছিল সে। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়েও জীবনে হার মানতে চায়নি কখনও। সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে নিজ এলাকার রংপুর শহরের আমজাদ হোসেনের সাথে বিয়ে করে সে। সংসার করাকালে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জন্মস্থান ছেড়ে রাতের অন্ধকারে অজানার উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়ে ৭ বছর আগে একদিন ঝিনাইদহ এলাকায় এসে নামে। এরপর ঝিনাইদহ শহরের অদুরে হলিধানী বাজারে ছোট্র একটি খুপড়ি ঘর ভাড়া করে শুরু করে হোটেল ব্যবসা ।

গত ১ বছর আগে শহিদুলের সাথে বিয়ে হবার পর স্বামী ও সতীনের নির্যাতনের স্বীকার হয় সে।

এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় স্বামী শহিদুল ও সতীন চম্পাকে আসামী করে  একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারী স্বামী শহিদুলকে পুলিশ আটক করে । যার নং ১৮, তারিখ: ২৩-০১-১২ ধারাঃ ৪(২)(ক)/১১(ক)(খ)/৩০। এ মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসাবে রুপান্তরিত হবে বলে সদর থানা পুলিশ জানায়।

মামলার আইও এসআই আজিজুর রহমান মাজেদার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান,তার মৃত্যুকালে জবানবন্দি নেওয়া আছে। অপর আসামী চম্পা খাতুনকে গ্রেফতারের পচেষ্টা চলছে।

মামলাটি বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্থবায়ন সংস্থার ঝিনাইদহ ইউনিট আইনী সকল প্রকার সহায়তা দিচ্ছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহারিয়ার রহমান/ঝিনাইদহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here