বিভাস দত্ত, ফরিদপুর

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম

ফরিদপুর সাথলা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মলয় বোস (৪৩) কে  মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় চেয়াম্যানের সাথে থাকা যুবলীগ নেতা সোহাগ খান (৩২)কে কুপিয়ে মারত্মক জখম করে হামলাকারীরা। ইউনিয়নবাসীর অতিপ্রিয় এ চেয়ারম্যান খুন হওয়ায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মলয় বোস স্থানীয় সারকদিয়া গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ বোসের ছেলে। ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা  হয়।

সালথা থানার ওসি আফসার উদ্দিন জানান, ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কাজ শেষ করে চেয়ারম্যান মোটরসাইকেল নিয়ে আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল নামকস্থানে পৌছলে ফকিরহাট বাজার থেকে সামান্য দূরে রাস্তার ওপর ৫/৬ জনের একদল দুর্বৃত্ত রাস্তার উপর নছিমন ও টানারশি রেখে তার গতিরোধ করে। মোটরসাইকেল থামনোর সাথে সাথেই তাকে ধারলো অস্ত্র দিয়ে উপূর্যপরি মাথায় ও পিঠে আঘাত করে হামলাকারীরা। এসময় ঘটনাস্থলেই চেয়ারম্যান মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মটরসাইকেলে থাকা অপর আরোহী সোহাগকেও কুপিয়ে মারত্মকভাবে জখম করা হয়। এ সময় সোহাগের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে নছিমন নিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। সোহাগ দৌড়ে রনকাইল গ্রামে একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ওই বাড়ির লোকেরাই পরে সোহাগকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। চেয়ারম্যান মলয় বোসের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা আবার নসিমন নিয়ে সালথার দিকে চলে যায়। নিহতের পরিবারে স্ত্রী,এক পুত্র ও একটি কন্যা সনত্মান রয়েছে। গুরুতর আহত সোহাগকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মলয় হত্যা নেপথ্যের কারন

নিজ এলাকায় জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় সমপ্রতি ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার হাউজিং এষ্টেটের একটি ভবনের নিচ তলায় সপরিবারে ভাড়া থাকতেন মলয় বোস। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার উপর দুইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষিতে মলয় বোস স্থানীয় সালথা থানা ও ফরিদপুরের আদালতে একাধীক মামলা ও জিডি করেছিলেন। গত ৮ জানুয়ারী সালথার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীসহ মলয়বোসের উপর হামলাকারী তারা চেয়ারম্যান ও বকুল মাতুব্বর গংয়ের বিচারের দাবীতে বিশাল মানব বন্ধন করে এলাকাবাসী। সেই মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে মলয় বোস নিজেও উপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারনা এই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খুন হয়েছেন মলয় বোস।

এক সময়ে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলো মলয়। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ থাকলেও নিজ এলাকায় মলয় বোস ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়নের জাদরেল প্রার্থীদের পরাজিত করে আটঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় থেকেই এলাকার বকুল মেম্বার এবং ইমামুল হোসেন ওরফে তারা চেয়ারম্যানের সাথে বিরোধ চলছিলো তার।  ইউপি নির্বাচনে বকুল মেম্বার ছিলো মলয় বোসের প্রতিদ্বন্দ্বি । দু’জনের বাড়িও একই গ্রামে। বকুল মেম্বার এবং তারা চেয়ারম্যান মলয় বোসকে হত্যা করতে পারে বলে ইতিপুর্বে মলয় বোস সালথা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছে। ইমামুল হোসেন তারা মিয়া ওরফে তারা চেয়ারম্যান পাশ্ববর্তী গোট্টি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগ নেতা। তারা চেয়ারম্যানের সাথে মলয় বোসের পারিবারিক বিরোধ একাত্তর সাল থেকে। তারা চেয়ারম্যান ছিলো রাজাকার। সে সময় মলয় বোসের পরিবারের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ আছে তারার বিরেুদ্ধে। মলয় বোস সে সকল ঘটনা নিয়ে সোচ্চার ছিলো তারার বিরুদ্ধে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে চেয়ারম্যান মলয় বোসের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দলে ছিলো আটঘর ইউনিয়নের বকুল মেম্বার ,কাদের মোল্লা এবং তারা চেয়ারম্যানের ভাগনে এনায়েত সহ কয়েকজন। গতকাল দুপুরে আটঘর ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামে একটি সালিশ বৈঠকে যোগদানের কথা ছিলো চেয়ারম্যান মলয় বোসের। ওই সালিশ বৈঠকে চেয়ারম্যানের যোগদানের বিষয়টি আগে থেকেই জানতে পারে ঘাতক সন্ত্রাসীরা । সে হিসেবেই নসিমন নিয়ে আপেক্ষা করতে থাকে যাওয়ার পথে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি কোন ঘাতক।

নিহত মলয়বোসের বোন ভক্তিরানী বোস তার ভাইয়ের হত্যাকান্ডের জন্য প্রসাশনকে দায়ী করে বলেন, মলয় অনেকবার পুলিশও প্রসাশনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলো। প্রশাসন একজন ইউপি চেয়ারম্যান হওয়া সত্বেও আমার ভাইয়ের জীবন বাচাতে ব্যার্থ হয়েছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আওলাদ আলী ফকির মলয় বোস হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে বলেন, তাহার সাথে থাকা সোহাগ গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় আমরা হামলাকারীদের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছিনা। সোহাগ কিছুটা সুস্থ হয়ে মুখ খুললেই হত্যা রহস্য উম্মচিত হবে। তাকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থল ও আটঘর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রাখা হয়েছে। রহস্যউৎঘাটনে ও হামলাকারীদের খুজে বের করতে আমাদের অভিযান চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here