‘মরে গেলেও’ আরএসএসের সঙ্গে আপস নয় : রাহুল গান্ধী

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মাতৃসংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতার জন্য একেবারেই প্রস্তুত নন দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী (৫২)। ভারতের সংবাদমাধ্যম বর্তমানে শাসকদলের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে সমালোচনাও করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আরএসএস প্রসঙ্গে কঠোর বার্তা দিয়েছেন কংগ্রেসের এই ডি ফ্যাক্টো নেতা। নিজের আপন চাচাত ভাই ও বিজেপির জেষ্ঠ্য নেতা বরুণ গান্ধী সম্পর্কিত এক ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, ‘আমি বরং শিরোচ্ছেদের শিকার হবো, কিন্তু তবু কখনও আরএসএসের কার্যালয়ে যাবো না; কোনো সমঝোতা করব না তাদের সঙ্গে।’

ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ইন্দিরা গান্ধীর দুই সন্তান ছিলেন রাজীব গান্ধী ও সঞ্জয় গান্ধী। রাজীব গান্ধীর দুই সন্তান রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী; আর সঞ্জয় গান্ধীর সন্তানের নাম বরুণ গান্ধী।

ইন্দিরা গান্ধী প্রথমে তার ছোটো ছেলে সঞ্জয় গান্ধীকেই কংগ্রেসের শীর্ষপদে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন; ভারতের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার এমপিও ছিলেন সঞ্জয়।

কিন্তু ১৯৮০ সালে দিল্লিতে এক বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যু হলে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে বড় ছেলে রাজীব গান্ধীকে নিয়ে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর কংগ্রেসের সভাপতির পদে আসীন হন রাজীব। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি।

এদিকে, দলের অভ্যন্তরে ক্ষমতাচর্চা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সঞ্জয় গান্ধীর বিধবা স্ত্রী মানেকা গান্ধী। সঞ্জয়-মানেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান বরুণ গান্ধীও মায়ের পথ অনুসরণ করে যোগ দেন বিজেপিতে।

M-V
মানেকা গান্ধী ও বরুণ গান্ধী

বর্তমানে বরুণ গান্ধী (৪২) বিজেপির একজন জেষ্ঠ্য ও প্রভাবশালী নেতা। ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশেল পিলভিট আসনের এমপিও তিনি।

রাজনৈতিক সফরে বর্তমানে ভারতের পাঞ্জাবে অবস্থান করছেন রাহুল গান্ধী। মঙ্গলবার রাজ্যের হুশিয়ারপুর শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে বরুণ গান্ধী সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, ‘বরুণ কোনো এক সময়ে আরএসএসের চিন্তাধারা, মতাদর্শকে আপন করে নিয়েছিল, এখনও সে পথেই আছে; কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়।’

‘আমি তার ভাই; যদি কখনও আমাদের সাক্ষাৎ হয়— তাকে জড়িয়ে ধরব। কিন্তু তার চিন্তাধারাকে কখনও গ্রহণ করতে পারব না।’

‘এবং আর একটি কথা হলো, যদি সে কখনও কংগ্রেসের কোনো কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে— তাহলে তার জন্য সমস্যা হবে। আমার চিন্তাধারার সঙ্গে তার মতাদর্শ মেলে না। আরএসএসের কার্যালয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেও আমার নেই।’

ভারতের সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্ষমতাসীন বিজেপির নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘কংগ্রেস বরাবরই স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল প্রচারমাধ্যমে বিশ্বাসী। তাদের কাজ হলো দেশের প্রকৃত চিত্র হাজির করা; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য— ভারতের মিডিয়া ধীরে ধীরে শাসকদলের প্রচারযন্ত্রে রূপ নিচ্ছে এবং সমাজে প্রতিনিয়ত ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ফলে সমাজে বিভাজনও দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে।’

‘এবং আমি অবশ্যই এজন্য সাংবাদিকদের দোষ দেবো না; আমি তাদের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে জানি। সাংবাদিকদের মালিকের নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয়। এ কারণে আমি সাংবাদিকদের সমালোচনা করছি না, আমি সমালোচনা করছি সংবাদমাধ্যম কাঠামোর।’

ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচন নির্বাচন হবে ২০২৪ সালে। সেই নির্বাচন বিজেপির জন্য ‘বিপর্যয়কর’  হবে মন্তব্য করে কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, ‘সামনে নির্বাচনে বিজেপিকে বিশাল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। দিন দিন দেশে অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। এসবের ফলে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ জমছে, তারই প্রকাশ ঘটবে সামনের নির্বাচনে।’

সূত্র : এএনআই

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here