বরকলের তবলাবাগের কাপ্তাই হ্রদ থেকে অপহ্রত পাচঁ জেলেকে উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী ডিসি অফিস ভাংচুরের ঘটনায় আটক ১৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীর স্বজনরা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির শিকার হয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের রিজার্ভ বাজারের একটি আবাসিক হোটেলে এঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় কোতয়ালী থানার পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
ডিসি অফিস ভাংচুরের ঘটনায় আটককৃতদের সবাই বরকলের ভূষনছড়া এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের স্বজনরা সবাই সম্মিলিতভাবে রাঙামাটি রিজার্ভ বাজারের ব্যবসায়ী নিজামের মালিকানাধীন ভূষনছড়ার বাসিন্দা মোঃ ফারুক কর্তৃক পরিচালিত আল ফারুক হোটেলে রাত যাপনের উদ্দেশ্যে রুমভাড়া নেয়। লঞ্চ ঘাটের কাছে তারপর নিজ এলাকার মানুষ হোটেলটি পরিচালিত করে তাই বরকল উপজেলা থেকে রাঙামাটি শহরে আগত সবাই ঔ হোটেলটিতে রাত্রিযাপন করে। তাই স্বজনদের সাথে দেখা করতে রাঙামাটিতে এসে নির্ভয়ে সকলে মিলে উঠেন হোটেল আল ফারুকে। গত দু’তিন দিন যাবত তারা সবাই ঔ হোটেলে অবস্থান করে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন রাঙামাটি কোতয়ালী থানায়। কারন থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মনির হোসেনের সাথে দেখা করে কাকুতি মিনতি জানাতো আটককৃত ১৬জন গরীব অসহায় মানুষগুলোকে রিমান্ডে এনে যাতে নির্যাতন না করে। কিন্তু বিপদ যেন তাদের পিছু ছাড়েনা। সারাদিন থানায়-মামলায় নিয়োগকৃত উকিলের বাসা আবার কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার কাছে ছুটোছুটি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাতে ভাড়া করা রুমে গিয়ে যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন রাত সাড়ে তিনটার সময় হোটেল বয় সুমন (১২) এর ডাকে ঘুম ভাঙে তাদের। ভিতর থেকে জিজ্ঞাসা করলে বাহির থেকে একজন বলে উঠল আমরা ডিবি পুলিশের লোক। দরজা খুলতেই তারা বলল এখানে হেরোইন বিক্রি হচ্ছে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমরা সবকিছু পরীক্ষা করব এই কথা বলে ভিতরে প্রবেশ করে এলোপাতারি মারধর করে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় মাদকসেবী চারটি ছেলে। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, স্বজনকে ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে হাসঁ-মুরগী বিক্রি করে আনা নয়জনের সর্বমোট প্রায় ত্রিশ হাজার টাকাসহ সঙ্গে থাকা সবকিছু কেড়েঁ নেয় তারা।
জেল খানায় আটক রিমান্ডে থাকা স্বামীর একমাত্র স্মৃতি চিহ্ন আটআনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুল ও দেড় আনা ওজনের নাক ফুলটিও রক্ষা করতে পারেনি গৃহবধূঁ কোহিনুর আক্তার সেগুলোও ছিনিয়ে নিল তারা। প্রতিবাদ করতে গেলে তিন বছরের একমাত্র পুত্র সন্তানটিকে কম্বল পেছিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায় তারা। সন্তানে মুখের দিকে চেয়ে ভয়ে সবকিছু তাদের হাতে তুলেদেন তিনি। এসময় রুমের ভিতরে থাকা আটককৃত একজনের স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টাও চালায় তারা। এক ভীতিকর পরিস্থিতির শিকারে পড়ে সবাই কান্নাকাটি করতে থাকলে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাদের কাছে ৬০ হাজার টাকা চাদাঁ দাবি করে মাদকসেবী সন্ত্রাসীরা হুমকি প্রদান করে দাবিকৃত চাদাঁ না দিলে ভবিষ্যতে রাঙামাটিতে আসতে পারবি না তোরা। এসময় রুমের ভিতর থেকে টয়লেটে যাবার কথা বলে রফিকুল ইসলাম নামের একজন কৌশলে বেরিয়ে এসে কোতয়ালী থানার এস আই জাহাঙ্গীরকে মোবাইলের মাধ্যমে ঘটনাটি জানায়। এরপর টহলরত সেনা বাহিনীর একটি দল ঘটনা আচঁ করতে পেরে ঘটনাস্থলে গেলে মাদকসেবী সন্ত্রাসীরা দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে সকালে কোতয়ালী থানার এসআই জাহাঙ্গীর ও এসআই নাজমূল ঘটনাস্থলে গিয়ে হোটেল বয় সুমনের কাছে ঘটনার বিবরন শুনে অভিযান চালিয়ে শহরের অভিজাত পরিবারের চারধনীর দুলালের মধ্যে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসলে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা তাদের সনাক্ত করে। ধনীর দুলালরাও ঘটনা স্বীকার করে। আটককৃতরা হলো রিজার্ভ বাজারে লঞ্চ কোম্পানী ফখরুদ্দিনের ছোট ছেলে মোঃ আব্দুর কাদের মায়া ওরফে মনির হোসেন মনির (২৬), হোটেল আল হেলালের মালিক ডাঃ আব্দুল হকের ছোট ছেলে মমিনুল হক (২১) ও বনরূপার কাঠ ব্যবসায়ী আহমদ নবীর ছোট ছেলে তারেক আমান শাওন (২৩)। এদিকে উক্ত ঘটনার মূল হোতা অপর আসামী ছাত্রলীগ কর্মী রাজীব পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ
রাঙামাটির কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন,কতো বড় দুঃসাহস,এই ছোট্ট শহরে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এই অপকর্ম করেছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রেফতারকৃতরা শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং মাদকাসক্ত বলেও জানান তিনি। এসময় তাদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল সেট, আট হাজার টাকা, ছিনিয়ে নেয়া কানের দুল ও এক পুড়িয়া হেরোইন উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে গত ৪ ডিসেম্বর ভূষণছড়া এলাকার পাচঁ জেলে অপহৃত হয়, ঘটনায় তাদের উদ্ধারের দাবিতে রাঙামাটি শহরে মিছিল থেকে আটক হয় ১৬ গ্রামবাসী। দেখা করতে এসে আটককৃতদের স্বজনরা এবার আক্রান্ত হলো গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতের কবলে। এ যেন “মরার উপর খরার ঘাঁ”।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আলমগীর মানিক/রাঙ্গামাটি