মোঃ আজিজুর রহমান ভূঁঞা বাবুল, ময়মনসিংহ ব্যুরো ::
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে সন্তান জন্মদিতে আসা নারী হালিমা খাতুনকে ভর্তির পর কন্যা সন্তান জন্ম হলে এর পরই হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) নবজাতিকার চিকিৎসা চলছিল। এরই মধ্যে কয়েক ঘন্টা পর নবজাতিকাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন চিকিৎসক। হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় মৃত্যু সনদও।
এরপর মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতেই নড়ে উঠে নবজাতিকা। দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে ফের হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। অবশেষে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মৃত্যু হয় প্রাণ ফিরে পাওয়া ওই নবজাতিকার।এমন পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে নবজাতিকার পরিবার ও
এলাকাবাসী। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর মমেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় এমন চাঞ্চল্যের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সাধারণ মানুষজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার ত্রিশালের কানিহারী ইউনিয়নের বড়মা গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম তার স্ত্রী হালিমা খাতুনকে রোববার (০৬ আগস্ট) ভর্তি করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে। ওইদিন রাতে স্বাভাবিক প্রসবে (নরমাল ডেলিভারি) মাত্র ৯০০ গ্রাম ওজনের কন্যা সন্তানের জন্ম দেন হালিমা খাতুন।গর্ভাবস্থায় থাকার মধ্যে মাত্র সাত মাসের মাথায় জন্ম নেওয়া ওই নবজাতককে মমেকের নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রে(এনআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে মৃত্যু সনদ দেন নিউনেটোলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার। ওই মৃত্যু সনদে উল্লেখ করা হয় অত্যন্ত কম ওজন ও সঠিক সময়ের পূর্বে জন্ম নেওয়ায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
মৃত্যুর খবর পেয়ে মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নবজাতকের মরদেহ গ্রহণ করে নিয়ে যান বাবা সাইফুল ইসলাম। সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে যাওয়ার পথে সদরের চুরখাই এলাকায় যেতেই নবজাতক নড়াচড়া করে উঠে এবং নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। ওই অবস্থায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা ঘুরিয়ে ফের মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক)হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
নবজাতকের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আমার মা আর ফুফুকে জানানো হয় বাচ্চা মারা গেছে, তাকে বাড়ি নিতে যেতে। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি ত্রিশাল থেকে হাসপাতালে ছুটে এসে মৃত্যুর সনদ নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করি। এরপর মাঝামাঝি রাস্তায় আসার পর হঠাৎ আমার বাচ্চাটি নড়ে উঠে এবং দেখি বড় করে শ্বাস নিচ্ছে। পরে গাড়ি ঘুরিয়ে আবারও হাসপাতালের এনে ভর্তি করি। পরে জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে নবজাতিকাকে হাইফো অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে এনআইসিইউতে স্থানান্তর করেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহবুব হোসাইন। পরবর্তীতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মৃত্যু হয় প্রাণ ফিরে পাওয়া ওই নবজাতিকার।
নবজাতকের চাচা আবু হানিফ বলেন, ‘ফের হাসপাতালে ভর্তির পর এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় (মঙ্গলবার) রাত ১২টার দিকে আমার ভাতিজি মারা যায়। পরে বাড়িতে নিয়ে আজকে (বুধবার) সকালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’
মমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘নবজাতিকাকে গুরুত্ব সহকারে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে, কীভাবে কি হয়েছে।তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’