ডেস্ক রিপোর্ট::  ঋতু পরিক্রমায় আবারও এসেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। জ্যৈষ্ঠ মাস মানেই মৌসুমী ফলের আগমন। সমতলের অনেক জেলার মতোই রাঙ্গামাটির পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হয় আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস ও জামসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের। ফলে সেইসব মৌসুমী ফলের সুগন্ধে ভরে উঠেছে স্থানীয় বাজারগুলো।

সরেজমিনে রাঙ্গামাটির বনরুপা, কলেজগেট ও রিজার্ভ বাজারের মত বড় বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন মৌসুমী ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। বাজারে আনারসের আধিক্য বেশি দেখা গেলেও বাদ যায়নি আম, কাঁঠাল, লিচু, জামসহ অন্যান্য ফলও। রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে নিজেদের বাগানে উৎপাদিত ফল নিয়ে রাঙ্গামাটি সদরে বিক্রির উদ্দেশে এসেছেন অনেক কৃষক এবং ছোট বাগান মালিকরা। অন্যান্য ফলের দাম নিয়ে বিক্রেতাদের সন্তুষ্ট থাকতে দেখা গেলেও আনারস নিয়ে বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে অসন্তুষ্টি।

আনারস বিক্রেতা উজ্জল চাকমা বলেন, আমরা আনারসের যে দাম পাচ্ছি তাতে আমাদের পোষায় না। বাগানে আনারস লাগানো থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু পরিশ্রম অনুযায়ী আমরা দাম পাচ্ছি না।

আরেক বিক্রেতা সাধন চাকমা বলেন, আমরা এখন প্রতি জোড়া ছোট আনারস ৩০ টাকা করে বিক্রি করছি। এরচেয়ে একটু বড়গুলো জোড়া ৪০, আরেকটু বড়গুলো ৬০ টাকা জোড়া বিক্রি করছি। বৃষ্টি পড়লে আনারস একটু কম বিক্রি হয়। যেগুলো বিক্রি হয় না সেগুলো পেকে গেলে আমাদের ফেলে দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এতে আমাদের ক্ষতিই হচ্ছে।

অন্যদিকে কাঁঠাল বিক্রেতা সুখিময় চাকমা বলেন, আমি নিজের গাছের কাঁঠাল নিয়ে এসেছি। কাঁঠাল বিক্রি করে মোটামুটি ভালোই দাম পাচ্ছি। এই দামে আমি সন্তুষ্ট।

এদিকে রাঙ্গামাটিতে আমের বাজার এখনো তেমন জমে উঠেনি। স্থানীয়ভাবে আম্রপালি এবং রাংগুয়াই জাতের আমই বেশি চাষ হয় এখানে। তবে এখনো সেভাবে আম বাজারে উঠতে শুরু করেনি। বিক্রেতারা জানালেন, জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে স্থানীয় আম্রপালি বাজারে উঠতে শুরু করবে।
আম বিক্রেতা মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আপাতত স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়া দেশি আম, মল্লিকা, ল্যাংড়া এসব জাতের আম বাজারে এসেছে। অন্যান্য আম এখনো আসা শুরু হয়নি। তবে গাড়িভাড়া বেশি হওয়াতে আমের দামও একটু বেশি। তাছাড়া বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও কম বলে জানান তিনি।

প্রতিবছর রাঙ্গামাটি থেকে বিপুল পরিমাণ আনারস, কাঁঠাল, লিচু ও তরমুজসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির উদ্দেশে। রাঙ্গামাটির বাইরের মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা ফল মৌসুমে এখানে এসে বাগান মালিকদের কাছ থেকে ফল ক্রয় করেন এবং পরবর্তীতে ট্রাক ভর্তি করে সেই ফল পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হন, অন্যদিকে সারাদেশের মানুষ উপভোগ করতে পারেন এই মৌসুমী ফলগুলোর স্বাদ।

শহরের ট্রাক টার্মিনাল এবং ফিসারী বাঁধ সংলগ্ন নৌ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মৌসুমী ফল ভর্তি ইঞ্জিনচালিত নৌকার সমারহ। বেতের ঝুড়ি ভর্তি করে সেসব ফল নৌকা থেকে তুলে এনে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপরই মৌসুমী ফলভর্তি এসব ট্রাক ছেড়ে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।

ঢাকা থেকে আসা মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী আব্দুল সোবাহান বলেন, আমরা অনেক ব্যবসায়ীই ফল কেনার জন্য প্রতিবছর রাঙ্গামাটিতে আসি। আমাদের সঙ্গে অনেক কৃষক এবং বাগান মালিকের চুক্তি করা থাকে। তাদের থেকে ন্যায্য দামে পণ্য ক্রয় করে আমরা এসব ফল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেই। রাঙ্গামাটির আনারসের কদর সব জেলাতেই আছে।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলা মিলে ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে সম্ভাব্য ফলন ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। তবে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়াতে ফলন কিছুটা কম হয়েছে।

আরও জানা যায়, চলতি বছর রাঙ্গামাটিতে আনারস চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। সম্ভাব্য ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৫ মেট্রিক টন। যদিও আনারস তোলার প্রকৃত মৌসুম এখন এই জৈষ্ঠ্য মাস, কিন্তু অনেক কৃষক তাদের ফসল আগাম তুলে ফেলেছেন। কাঁঠাল চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে এবং সম্ভ্যাব্য ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩০ মেট্রিক টন। এছাড়া লিচু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৯১ হেক্টর জমিতে এবং সম্ভাব্য ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টর ৯ মেট্রিক টন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here