ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  ভাষা শুধু ভাব প্রকাশের বাহনই নয়, একটা জাতির অস্তিত্ব আর আত্মপরিচয়েরও বাহক। জন্ম থেকে একটি শিশু যে ভাষার পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠে, সেই ভাষা ছাড়া কি সে মনের ভাব পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে? তাইতো মায়ের মুখে শোনা বুলি বা ভাষাই হয়ে ওঠে প্রতিটি শিশুর মাতৃভাষা। অথচ বাঙালি জাতির সেই মাতৃভাষাকেই বাতিল করতে চেয়েছিল পাকিস্তানি শাসক-শোষকেরা। রাষ্ট্রের জমিনে বুনতে চেয়েছিল উর্দু ভাষার বীজ। অকুতোভয় বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে।

চলছে গর্ব আর অহংকারের ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। আগামীকাল মঙ্গলবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে প্রস্তুত হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। করোনাকাল কাটিয়ে এবার অনেকটাই উন্মুক্ত পরিবেশে স্মৃতির মিনারে শহীদদের চরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। অবনত মস্তকে স্মরণ করবে ভাষাশহীদ সালাম, বরকর, রফিক, জব্বার ও শফিকদের। একুশে ফেব্রুয়ারি যথাযথ ও সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে শহীদ মিনার ঘিরে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে রং-তুলির শিল্পীদের ব্যস্ততা। পাকিস্তানী বর্বর শাসকদের অত্যাচার, নির্যাতন আর বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠছে তুলির আঁচরে। শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকার দেওয়ালগুলোতে আঁকা হচ্ছে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা বর্ণমালাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা।

যে বাংলা ভাষা একদিন পাকিস্তানি শাসকেরা মুছে দিতে চেয়েছিল সে ভাষায় লেখা হচ্ছে বর্ণিল দেয়াললিখন। মহান ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পটভূমি আর বোনের হাতে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহের দেয়ালচিত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে হানাদারদের দুঃশাসনের কাল। এভাবেই ভাষা আন্দোলনের নানা পটভূমি ফুটে উঠছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার দেওয়ালগুলোতে।

রক্তিম বর্ণের রং দিয়ে আঁকা হয়েছে শহীদ মিনারের মূল বেদি। বিভিন্ন রং দিয়ে আঁকা আলপনায় শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছেন বাঙালির রুচিবোধ ও শিল্প সৌন্দর্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পূর্ব কোণের রাস্তা থেকে একেবারে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত আঁকা হচ্ছে আলপনা৷ বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে আলপনার কাজ শেষ করে সে পথটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৩ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপনের জন্য নিরলসভাবে দেওয়াল লিখন ও আপলনার কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শহীদ মিনারের বেদিমূল সাজানোর কাজ করছিলেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাকি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবার গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও সফলভাবে আমরা কাজ সম্পাদন করতে পেরেছি। গত বছর সুন্দর কাজের পর তা বৃষ্টিতে মুছে গিয়েছিল৷ এবার তা হচ্ছে না। আলপনার সৌন্দর্য আমরা পুরোটাই উপভোগ করতে পারবো৷ সবচেয়ে বড় কথা, শহীদ মিনারের এ কাজটি করতে পারা আমাদের জন্য বড় সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা সৌভাগ্যবান।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশে কেন্দ্ৰীয় শহীদ মিনারের বেদিমূল প্রস্তুত করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যথাসময়ে তা সম্পন্ন হবে। এবছর প্রতিটি সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায়েও শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন।

বেদিমূলে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য উপাচার্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান ।

প্রথম প্রহরের সময়সূচি:
রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সরকারের মন্ত্রীবর্গ, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেতারা।

এরপর পর্যায়ক্রমে তিন বাহিনীর প্রধান, ভাষাসৈনিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সম্মানিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিন ও হলের প্রাধ্যক্ষরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here