নিজস্ব প্রতিবেদক:: জ্বালানীখাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার উপ-মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন। জেষ্ঠ অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে সংস্থাপন বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের চলতি দায়িত্ব বাগিয়ে নেন তিনি। প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক অসুস্থ থাকায় তার দায়িত্বও পালন করছেন আমজাদ হোসেন। পেট্রোবাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ দুটি পদের দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়ে পুরো জ্বালানী খাতের ওপর ছড়ি ঘোড়াতে শুরু করেন তিনি। তার কথা না শুনলেই পেট্রোবাংলার অধিনস্ত ১৩ টি প্রতিষ্ঠানের যে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেনামে চিঠি লিখে নিজের পছন্দের কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্তের নামে হয়রানী করার একাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে খোদ পেট্রোবাংলায়। এমনকি আমজাদ হোসেনকে কমিশন না দিয়ে কেউ এলপিআরের টাকাও পাননা কোন কর্মচারী-কর্মকর্তা। এভাবেই শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। টাকার গরমে ধরাকে শরা জ্ঞান করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো পেট্রোবাংলায়। আমজাদের দাপটের কাছে অসহায় তারচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তারাও।

পেট্রোবাংলা সুত্র বলছে, সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম ফাত্তাহর আমলে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন আমজাদ। ফাত্তাহ অবসরে গেলে পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক আলী ইকবাল মোহাম্মদ নুরুল্লাহকে ম্যানেজ করেন তিনি। মুলত নুরুল্লাহও আশির্বাদেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আমজাদ হোসেন। সাম্প্রতি আমজাদ হোসেনের কবল থেকে মুক্তি পেতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবেদনে এবস তথ্য জানা গেছে। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে খোদ পেট্রোবাংলায়। ভুক্তোভোগীরা জানান, আমজাদের দাপটে অতিষ্ট হয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে অবসর গ্রহনের আবেদন করেন সংস্থাপন বিভাগের উপ ব্যবস্থাপক বেগম মেহেরুন আহমেদ।

বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে তা নিশ্পত্তি করার নির্দেশ দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। মেহেরুনের পেনশনের ফাইলটি প্রক্রিয়াধিন থাকা অবস্থায় প্রশাসন বিভাগের চলতি দায়িত্ব পান আমজাদ। দায়িত্বে পেয়েই বেগম মেহেরুনের ফাইল আটকে দেন তিনি। এক বছর ধরে দ্বাবে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে অবশেষে আমজাদকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হন মেহেরুন।

একইভাবে মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ, অপারেশন এন্ড মাইন্স বিভাগের সাবেক পরিচালক মোল্লা মোবিরুল হোসেনও আমজাদের রোষানলে পড়ে নির্যাতনের শিকার হন। শুধু এরাই নয় পেট্রোবাংলার যে-কোন কর্মকর্তা কর্মচারী অবসরে গেলেই তার পরিণতি হয় মেহেরুনের মতো।

আমজাদকে কমিশন না দিলে বছরের পর বছর ঘুরেও পেনশনের ফাইল চালু কিংবা এলপিআরের এককালিন টাকা পাননা কেউ।
অধিনস্ত কোম্পানীগুলোর যে কোন পদন্নতি সংক্রান্ত কমিটিতে পেট্রোবাংলার একজন প্রতিনিধি থাকার নিয়ম রয়েছে।

কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে গেল দুই বছর ধরে সবগুলো কোম্পানীর পদন্নতি সংক্রান্ত কমিটিতে পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন আমজাদ হোসেন। এই সময়ের মধ্যে আমজাদকে নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ না দিয়ে কেউ পদন্নতি পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ ও বিপনন কোম্পানীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০০ জন কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন পেট্রোবাংলায়। নিয়মানুযায়ী প্রতি দুই বছর পর পর চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও দক্ষ জনবল বিবেচনায় বড় কোন ব্যাত্যয় না ঘটলে পুরোনো জনবলের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু আমজাদ হোসেন প্রশাসন বিভাগের দায়িত্বে এসেই ওই দরিদ্র দুইশো জন কর্মচারীকে জিম্মি করে মোটা অংকের চাঁদাবাজির চেষ্টা করেন। দেড়শো জনের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চুক্তি নবায়ন করেছেন। টাকা দিতে না পারায় বাকিদের চাকরি ঝুলিয়ে রেখেছেন আমজাদ হোসেন। বাকিরা টাকা দিতে না পারায় এখনো ঝুলে আছেন।

পেট্রোবাংলার নিয়মানুযায়ী, মহাব্যবস্থাপক পদে পদন্নতি পেতে হলে যে কোন কর্মকর্তার ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ১৪ বছরের মাথায় মাহাব্যবস্থাপকের পদ বাগিয়ে নেন ধুরন্ধর আমজাদ। অথচ ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আজো উপমহাব্যবস্থাপক পদে কর্মরত থাকার ভুরি ভুরি নজির রয়েছে পেট্রোবাংলায়। সুত্র বলছে প্রশাসন বিভাগ নিয়ন্ত্রনে থাকায় অনেক কর্মকর্তার এসিআর নম্বর কমিয়ে রাখেন। এমনকি একাধিক কর্মকর্তার নামে উরো চিঠি দিয়ে তার সুত্র ধরে পদন্নতি আটকে দেন কর্মকর্তাদের। কাউকে তার প্রতিপক্ষ মনে হলে পেট্রোবাংলা থেকে অধিনস্ত কোম্পানীগুলোতে বদলি করে দেন। এমনকি অধিনস্ত কোম্পানীগুলোর কর্মকর্তাদের এক কোম্পানী থেকে অন্য কোম্পানীতে বদলী করেও কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য করেন আমজাদ হোসেন।

পুরো জ্বালানী খাতের ওপর ছড়ি ঘোড়ানো আমজাদ হোসেন সংস্থাপন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হওয়ার আগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানীর ভারপ্রাপ্ত সচিব ছিলেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমান পাওয়ায় ডিমোশন নিয়ে পেট্রোবাংলায় সংযুক্ত করা হয়। সেখানে কিছুদিন ঘাপটি মেরে থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে সংস্থাপন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক পদটি বাগিয়ে নেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আমজাদ হোসেন জানান, প্রতিপক্ষরা তাকে ফাসাতে ও সামাজিক ভাবে হেও প্রতিপন্ন করতে বানোয়াট অভিযোগ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here