সোনা কেনার ও বাড়িতে তা জমানোর একটা প্রবণতা বরাবরই রয়েছে ভারতে৻ কিন্তু বর্তমানে তা একটা অবিশ্বাস্য জায়গায় পৌঁছেছে৻
ব্যাঙ্কিং ও ফাইনান্স বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা, ম্যাকুয়েরি তাদের এক সমীক্ষায় বলছে ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনের অর্ধেকের সমপরিমাণ অর্থ জমে রয়েছে সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাড়িতে৻
তাদের হিসেবে ভারতীয়দের ঘরে ১৮ হাজার টন পরিমাণ সোনা জমানো রয়েছে, যার মূল্য প্রায় এক লাখ কোটি ডলার৻
সোনা কিনে ঘরে জমিয়ে রাখার এই প্রবণতার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভারতের সার্বিক অর্থনীতির উপরে৻
ম্যাকুয়েরি বলছে ভারতের সোনার মজুদ বিশ্বের মোট সোনার মজুদের এগারো শতাংশ৻ শুধুমাত্র চীন সোনার মজুদের বিষয়ে ভারতের থেকে এগিয়ে৻
এই অর্থ মানুষের বাড়ি থেকে বের করে বাজারে লগ্নি করানোটা যে বিশেষ জরুরি তা স্বীকার করে ভারতের সরকার৻
কারণ, দেশি ও বিদেশি নানান কারণে ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ তার গতি হারাচ্ছে৻ কমে আসছে প্রবৃদ্ধির হার, সাথে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি৻ একইসাথে রুপির অবমূল্যায়ন ঘটছে৻
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময়ে সেনা কিনে জমিয়ে রাখা অর্থের কিছুটা পাওয়া গেলেও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সুবিধা হতো৻
ম্যাকুয়েরি জানাচ্ছে, বাজার থেকে কেনা সোনার বিরানব্বই শতাংশই এসেছে বিদেশ থেকে৻ ফলে সোনা আমদানিতে নগদ টাকাও বেরিয়ে যাচ্ছে ভারত থেকে৻
কেন এই সেনা প্রীতি?
এভাবে লাগাতার সোনা কিনে কেন অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছেন ভারতের মানুষ ?
পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, সামাজিক প্রথার পাশাপাশি কাজ করছে সোনাকে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখার প্রবণতা৻
দিল্লির এক গৃহবধু বিবিসিকে বলেন,“শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে সোনা পরাটা জরুরি৻ বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে৻ এতে দুটো কাজই হচ্ছে – গহনাও পরা হচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্যে বিনিয়োগও হচ্ছে৻“
তবে মুদ্রা বাজারের একজন বিশেষজ্ঞ, অশোক ওয়ার্দা‘র বক্তব্য, যারা সোনা কেনেন তারা শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করেন না – এই ধারণা ভুল৻
“কিন্তু কিছুটা পারিবারিক চাপে আর কিছুটা ট্র্যাডিশন রক্ষায় তারা হলুদ ধাতু কিনবেনই৻ তাদের থামানো যাবে না“৻
পাশাপাশি কালো টাকাকে সাদা করার মোক্ষম পন্থা সোনা কিনে ঘরে রেখে দেয়া৻ সেই কারণেও অনেকেই তাঁর কাছ থেকে সোনা কেনেন বলে স্বীকার করলেন দিল্লির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সোনা-ব্যবসায়ী৻
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জতিক ডেস্ক