কুড়িগ্রামে ভারতীয় গরুর দাপট, দেশি খামারিরা আতঙ্কে

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  করিডোর ব্যবস্থা নেই, ভারতীয় গরু আমদানির বৈধতাও নেই। তবু দেশীয় গরুর হাটে দেখা মিলছে ভারতীয় গরুর লম্বা সারি। দেশি গরু অপেক্ষায় দাম কম হওয়ায় বিশালদেহী এসব গরু নজর কাড়ছে হাটের পাইকার ও ক্রেতাদের।

দামের তারতম্যের কারণে দেশি গরু থেকে মুখ ফিরিয়ে সবাই ঝুঁকে পড়ছে চোরই পথে আসা এসব গরুর দিকে। এতে ছোট-বড় খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।

ভারতীয় গরুর অবৈধ অনুপ্রবেশে দেশীয় গরু বিক্রির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে প্রতিবছর। এসব কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন দেশি খামারিরা। গত শনিবার (২ জুলাই) সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী কোরবানির হাটে এমনি চিত্র দেখা গেছে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাঁশজানী গ্রামের খামারি আয়নাল হক বলেন, সরকার ভারতীয় গরুর কোনো করিডোর ব্যবস্থা রাখেনি। কিন্তু হাটে ভারতীয় গরুর অভাব নেই। আমরা যারা ছোট-বড় খামারি সারা বছর পরিশ্রম করে লাভের আশায় কোরবানির হাটে দেশীয় গরু বিক্রি করতে আসি, এখন ভারতীয় গরুর দাপটে আমাদের গরুগুলো খুব কম দামে বিক্রি করতে হয়। এভাবে প্রতিবছর লস খেয়ে অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিছে।

একই উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী গ্রামের ভারতীয় গরু বিক্রেতা জালাল উদ্দীন বলেন, বর্ডার হাট থেকে আমরা ভারতীয় গরুগুলো কিনে আনি। ওরা কীভাবে ভারত থেকে গরুগুলো আনে, তা আমার জানা নেই। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি গরু আনতে পারি নাই।

ভারতীয় গরুর দামের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ভারতে গরুর দাম কম। কিন্তু দেশে আনা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের টাকা দিতে হয় বলে দামটা একটু বেশি পড়ে। লস করে তো আর কেউ ব্যবসা করতে পারবে না।

আন্ধারির ঝাড় গ্রামের মাহতাব হোসেন বলেন, প্রতিবছর শুনি ভারতীয় গরু আসা বন্ধ। অথচ হাটে এসে দেখি ভারতীয় গরুর অভাব নেই। তাহলে ওই গরুগুলো কোন দিক থেকে আসতেছে?

তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রতি অনুরোধ, আপনারা মানুষ পাচারের মতো গরু পাচার চক্রের প্রতি নজর দেন। কেননা বেকারত্ব দূর করতে যেসব ছোট-বড় খামারিরা খামার করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন, এ রকম অবস্থা হলে তারা বিপদে পড়বেন।

মো. সাখাওয়াত হোসেন নামের একজন খামারি বলেন, ভারতীয় গরু আসার কারণে ব্যাপারিরা দেশি গরুর প্রতি তেমন দামাদামি করছে না। গরু নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফেরত যাচ্ছি।

কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১ হাজার ৭০টি খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৯ লাখেরও বেশি। এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ লাখ ৩৪ হাজার পশু প্রস্তুত আছে। আর এখানকার চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার। বাকি পশুগুলো যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম ব্যাটালিয়ন (২২ বিজিবি) লে. কর্নেল মো. আব্দুল মুত্তাকীম বলেন, যেহেতু চারদিকে বন্যা পরিস্থিতি, বিভিন্ন দিক থেকে হয়তো অবৈধভাবে ভারতীয় গরুগুলো আসতে পারে। সেগুলো বিক্রি করছেন তারা। কোরবানি উপলক্ষে সীমান্তে টহলব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here