দীপক রায় (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত):: ছোটবেলায় দেখতাম, গ্রামাঞ্চলে মাঝে মধ্যে সন্ধ্যেবেলায় সালিশি সভা বসত। বিষয়, জমির সীমানা নিয়ে বিবাদ। কিছু মিটতো, কিছু মিটতো না। পঞ্চায়েত, থানা হয়ে আদালতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়, তাও সীমানার ঝামেলা মেটেই না।
সেই নিয়ে গালিগালাজ, মারামারি, হাসপাতাল, পুলিশ এমনকি খুনও হয়েছে কোথাও কোথাও। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়, তবু দুই পক্ষের আমিন আর গ্রামের কিছু মোড়ল মাতব্বরেরা জমি মেপেই যায়, ঝগড়াও চলে, কিন্তু ফয়সালা হয় না।
ইদানীং একটু উল্টো চিত্র দেখি। এযুগের অল্পবয়সীরা জমি মাপার সময় দিব্যি বলে বসে, দু’চার আঙুল ছেড়ে দিয়ে ধরুন, পরে কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না। জায়গা একটু কম হোক তাও ভালো। অবশ্য এখনো আগের চিত্র পুরো নির্মূল হয়ে গিয়েছে, এমনটা বলছি না।
লাক্ষাদ্বীপ আর শ্রীলংকা’র মাঝে ভাগ্যিস সমুদ্র আছে, নইলে ভারতের সাথে সীমানা নিয়ে বিবাদ হওয়া অসম্ভব কিছু ছিল না। পাকিস্থান, চীনের সাথে তো বড় সড় সীমানা বিবাদ আছেই, অল্প হলেও ‘ডিসপুট’ রয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ, ভূটান, নেপাল, মায়ানমারের সাথেও। আর ‘আজাদ কাশ্মীর’, ‘আকসাই চীন’ তো অনন্তকালীন সমস্যা। কবে যে এই সমস্যা মিটবে, বা আদোউ মিটবে কিনা কেউ বলতে পারে না।
একটা বিষয় মাথায় ঢোকে না। এই প্রতিবেশী দেশগুলো টেবিলে বসে মেটাতে পারে না? কেন পারে না? সব দেশ বলে তাদের দাবী ঠিক। অন্য দেশের দাবী ভুল। ভুল কারো একটা আছেই। সব দেশের নাগরিকেরাই বিশ্বাস করে, তার দেশের দাবী ঠিক। কিন্তু তবু সমস্যা মেটে না কেন? সাত দশক হল ভারতীয় উপমহাদেশের এই সীমান্ত সমস্যা। অগুন্তি অর্থ আর জীবন ব্যয় হচ্ছে সব দেশেরই, কারো কম, কারো বেশি। তবু মিটছে না। কেন? আর কত দশক লাগবে?
মাঝে মাঝেই দেখি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নায়কেরা এক টেবিলে বসেন, নৈশভোজ সারেন। ঐক্যের বার্তা দেন। করমর্দন করে হাসিমুখে ছবিও তোলেন। কিন্তু সমস্যা থেকেই যায়। কিন্তু কেন? কোন উত্তর কি আদৌ নেই।
লেখকের মেইলঃ dipak2010roy@gmail.com