ভরা মৌসুমেও মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই: হতাশ জেলেরাজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: মেঘনার উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর রুপালী ইলিশের জেলা হিসেবে বেশ পরিচিতি রয়েছে। এখানকার প্রধান পেশা কৃষি হলেও জেলার বড় আকেটি জনসংখ্য মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সরকারী হিসাব মতে ৬২ হাজার জেলে এই পেশার সাথে জড়িত থাকলেও বেসরকারী হিসেবে লক্ষাধিক মানুষ এই মাছ ধরার সাথে জড়িত রয়েছেন।

প্রতি বছরই একটা নির্দিষ্ট সময়ে এখানকার সকল স্তরের মানুষ মেঘনায় ইলিশের দিকে চেয়ে থাকে। বর্তমানে মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। সারাদিন-রাতে নদীতে জাল ফেলে নদী থেকে প্রায় খালি হাতে অনেক জেলে ফিরে আসছেন। এতে ইলিশ শূণ্য হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের হাটগুলো।

গত বছর এই দিনে যেখানে লক্ষ্মীপুরের ঘাটগুলোতে রাত-দিন ইলিশ বেচাকেনায় ব্যস্ত থাকতো ক্রেতা ও বিক্রেতা, সেখানে এখন শূণ্যতা বিরাজ করছে। জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্য মার্চ-এপ্রিল দু’মাস সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। কিন’ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ১ মাসের বেশি সময় পার হলেও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। জাটকা নিধনের ফলে মাছের আকাল বলে দাবি করেন জেলেরা।

মজুচৌধুরীর হাট, মতিরহাট, লধুয়াঘাট, মোল্লারহাট ও আলেকজান্ডার এলাকার মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে তেমন মাছ নেই বললেই চলে। জেলে ও আড়ৎদাররা অলস সময় পার করছেন।

এ সময় জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে অনেক আগে। কিন’ নদীতে মাছ নেই। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে এবং মাছ শিকার করলে দুই/চারটা মাছ পাওয়া যায়। এ দিয়ে ইঞ্চিনচালিত নৌকার তেলের খরচও জোগাড় করা যায় না। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময় দুই মাস ও মে-জুন দুই মাসসহ চার মাস ৪০ কেজি হারে চাল দেয়ার কথা।

কিন্তু এসব ঘাটের আশপাশের তেমন কোন জেলেই চাল পায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। স’ানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নিজেদের স্বজনদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের চাল দেয়া হয়। এসব তালিকার বেশিরভাগই জেলে নয় বিভিন্ন পেশার লোকজন বলে দাবি তাদের।

অপরদিকে জেলেদেরকে দাদন দিয়ে এখন বেকাদায় পড়ছে দাদন ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় তারা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না।

জেলেরা জানান, আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আমাদের সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনে ঈদ আসছে, ঈদে পরিবার পরিজন, ছেলে, মেয়েদের নিয়ে কিভাবে চলবো সে চিন্তায় আছি।

জেলেদের অভিযোগ সরকারিভাবে বরাদ্ধ ভিজিএফের কার্ড নিতে এক হাজার টাকা করে আদায় করছেন চেয়ারম্যানরা। এরপরও চাল দেয়া হয়নি। পুরোটায় আত্মসাৎ করে নেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। গেল বছরও একই অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে। প্রশাসন নীরব থাকায় একের পর এক দিব্বি অনিয়ম করে যাচ্ছেন তারা।

সদর উপজেরার চররমনী মোহন ও চরকালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও মোহাম্মদ সাইফল্লাহ অনিয়মের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব এলাকায় যত জেলে রয়েছে, তার অর্ধেকও নিবন্ধতিত নয়। এ কারণে কার্ড পায়নি। যারা কার্ড পায়নি, তারা চাল না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। পর্যায়ক্রমে সকল জেলে যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সে চেষ্টা করা হবে। এ এছাড়া চাল কম দেয়ার কথা স্বীকার করে তারা বলেন, পরিবহন ও লেবার খরচের জন্য প্রতিমাসে ২-৩ কেজি করে কম দেয়া হচ্ছে। ১০/১২ কেজি করে কম দেয়ার বিষয় জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তারা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম মহিব উল্যাহ জানান. জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্রের ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের ফলে মেঘনা নদীর গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নদীতে ভরা মৌসুমে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। জাটকা ইলিশ যেখানে প্রতিপালিত হয় সে ৮/১০টি স্পট আছে সেগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে গেছে। ওই স্পটগুলো ড্রেজিং করলে আবার নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে এমনটাই মনে করে এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here