ছাইদুর রহমান, জামালপুর
বর্ষা চলে যাওয়ার পর পরই ব্রহ্মপুত্র তার রূপ যৌবন হারাতে থাকে। ভাদ্রের তালপাকা গরমে নদ শুকিয়ে একেবারে কঙ্কাল হয়ে পড়ে। তপ্ত বালি আর শরতের কাশফুলের ছটা ব্রহ্মপুত্র এক আলাদ বৈচিত্র ধারন করে। মাইলে পর মাইল জেগে উঠা ধুসর বালুর বিস-ৃর্ণ চর যেন কুলহারা এক সাগরের দিগন্ত ছায়া। খরতাপে ব্রহ্মপুত্র ওই সময় এক রুদ্ধ মুর্তি ধারণ করে। চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এ সময় ঝাপিয়ে পড়ে তপ্ত বালু মাটির উপর টেকসই সবজি আবাদে। বালু ও মাটির মিশ্রণে শীতকালীন সবজির ভান্ডারে পরিণত হয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ বেশিষ্ট জামালপুর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম গজারিয়া।
সদরের লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের একেবারে পূর্ব দক্ষিণ দিকে অবসি’ত। তবে চরের মানুষ মৌজাকে কয়েকভাগে ভাগ করেছেন। এবং নাম দিয়েছেন কান্দা গজারিয়া, টান গজারিয়া, নামা গজারিয়া ও রেহাই গজারিয়া। এই গ্রামের শতকরা ৯৫ জনই কৃষক খেটে খাওয়া দিনমজুর। বৈদ্যুতিক আলো থেকে বঞ্চিত চরবাসীর অধিকাংশই যুগ যুগ ধরে ভরা মৌসুমে নদের পানিতে মাছ ধরে, নৌকা চালিয়ে, গরুর গাড়ির খেপ মেরে, ছাগল পোষে, দিন মজুরি খেটে, ভিক্ষা করে দিন কাটিয়েছেন। কিন’ কৃষি বিজ্ঞানীদের অব্যাহত সঠিক পরামর্শে এবং কঠোর পরিশ্রমে গজারিয়াবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে এক নব দিগন্তের সূচনা করে। খোঁজে পায় তাদের বাঁচার স্বপ্নের ঠিকানা। বিগত ১০ বছর ধরে এই চরের মানুষ বিস-ৃর্ণ মাঠ জুড়ে করলার আবাদ করছেন। চলতি মৌসুমে এই গজারিয়ায় প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ জমিতেই করলার আবাদ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায়, শুধু করলা ক্ষেত আর ক্ষেত। গত প্রায় এক পক্ষকালের বেশি সময় ধরে ক্ষেত থেকে করলা তুলে বিক্রি করছেন বিভিন্ন হাটে বাজারে। কৃষকরা স’ানীয় জাত অপেক্ষা অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাতের করলার আবাদে বেশি মনোযোগী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গজারিয়ার প্রতিটি চাষিই অন্যান্য সবজির পাশাপাশি করলার ক্ষেত করেছেন। কথা হয় এই গ্রামের লাল মিয়ার সাথে। তিনি জানালেন, আমি এবার ৪ বিঘা জমিতে করলা আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবং ফলন ভালো হলে খরচ উঠে বিঘায় লাভ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে এক মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হওয়ায় কৃষকরা করলা আবাদে বেশি নজর দিচ্ছেন। গ্রামের হাশেম আলী, ফরহাদ, আব্দুল আজিজ, হযরত আলী, রিপন মিয়া, মোতালেব হোসেন বলেন, শোনেছি ঢাকায় নাকি আমাদের এই করলা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। অথচ আমরা স’ানীয় ঐতিহ্যবাহী নান্দিনা বাজারে রাজধানী থেকে আগত ফড়িয়াদের কাছে এখন বিক্রি করছি ৮ থেকে ১০-১২ টাকা কেজি। এই হিসেবে পাইকারী ৩’ থেকে সাড়ে চারশ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তারা আরও জানায়, মৌসুমের শুরুতে এই করলা প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১২ শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন’ বর্তমানে দাম কমে গেছে। চাষিরা জানায়, সার, বিষ, কীটনাশক, দিন মুজর খাঁটিয়ে বর্তমান বাজার দর কম থাকায় উৎপাদন খরচ উঠতে চাচ্ছে না। আর এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বলোগি চাষিদের কাছ থেকে কম দামে করলা কিনে লাভবান হচ্ছে।