বোরহান উদ্দিন
লেখক- বোরহান উদ্দিন

বোরহান উদ্দিন :: ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের কতগুলো আচরণে বহিঃপ্রকাশ। এক একজন মানুষের অভিব্যাক্তি একেক রকম । তাই কখনই একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব আরেকজনের মত হয় না । এটা হয়তো মানুষের ব্যক্তিত্বসম্পন্নের স্বকীয়তা । ব্যক্তিত্বের চেহারা গুরু গম্ভীর, হাস্যজ্বল, কুটিল, দয়াবান, সদা চঞল সবরকমই হতে পারে আর ব্যক্তিত্ব কিন্তু মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একই রকম থাকে না । এটা বিভিন্ন বয়সের সাথে পরিবর্তনশীল ।

ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা: “A brief definition would be that personality is made up of the characteristic patterns of thoughts, feelings and behaviors that make a person unique. In addition to this, personality arises from within the individual and remains fairly consistent throughout life”.

ব্যক্তিত্ব আর মানবিক সর্ম্পক আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানবিক সর্ম্পকের উন্নয়ন ছাড়া ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন অসম্ভব।

যাইহোক, ব্যক্তিত্বের সকল তত্বব্যাখা দেওয়া সম্ভব কি না জানি না। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ব্যক্তিত্ব তার স্বকীয় বংশগতি ও পরিবেশের যৌথ ফলাফল ।

মনোবিজ্ঞানীরা শারীরিক গঠন দেখে যেমন মানুষের মুখের আদল বা চেহারা, চোখ, আইব্রো, নাক, চুল, দাঁত, জিব্বা, ঠোঁট, হাতের গড়ন দেখে এমনকি পায়ের সেইপ দেখেও যে মানুষ চিনে ফেলেন। সেটাই বেশী মজার আর তাই নিয়েই আমার কৌতূহলী মনের জানালা খুলে গেলো।

মানুষের মুখের আদল বা চেহারার মাঝে যে ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে আছে তা শুধু বিজ্ঞানীরা কেনো আমাদের মা খালা গুরুজনেরা এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও বেশ নির্ভুলভাবেই বলতে পারবে বলেই আমার ধারনা। গোলগাল ও চৌকোনা মুখের মানুষেরা শেষজীবনে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটানোতে বিশ্বাসী। লম্বাটে চিবুক জেদী চরিত্রের লক্ষন ও নিজের স্বপ্ন পূরণে হন বদ্ধ পরিকর। চওড়া চেটালো মুখের মানুষরা খুব বেশী সংবেদনশীল হয়ে থাকেন ।

আজকালকার মেয়েরা তো আইব্রো ছেঁচে তুলে চিকন চাকন বানাতেই পছন্দ করে বেশী। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, পাতলা চিকন আইব্রো এর চাইতে ঘন ও মোটা ভ্রু সৌভাগ্যের প্রতীক ।

উঁচু খাড়া নাক যেমনই উদারতার প্রতীক তেমনি, বাকানো নাক ধূর্ত ও কুটিল চরিত্রের লক্ষন । ছোট ছোট হরিণী চক্ষু মানব মানবীরাও নাকি হয় খুবই অস্থির চিত্তের আর কাজেকর্মে মনোযোগেও তারা তেমনি অস্থির ।

উচু কপাল সৌভাগ্যের প্রতীক আর নীচু কপালীদের জীবনে অনেক স্ট্রাগল করতে হয় । সিল্কী চুলের মেয়েরা বস্তুত সহজ সরল নাজুক

প্রকৃতির ও সহনশীলা হন। আর একটু কোকড়া, রাফ চুলের মানুষেরা হয় কঠোর ও বুদ্ধিতে প্রখর। অনেক বড় কপাল বা হেয়ারলাইন বেশ পেছনদিকে এমন মানুষের দুঃখ করার কিছুই নেই, তারা হয় হাই লেভেল ইনটেলিজেন্ট। আর যাদের মাথায় চুল নাই তারা হয় হাইলি ইবলিস ।

মনোবিজ্ঞানীদের মতেও পায়ের গঠন, রঙ, মসৃনতা আর পায়ের প্রতিটা আঙ্গুল ডিফারেন্ট মিনিং বয়ে চলে। মসৃন, লম্বা, ঝকঝকে পায়ের অধিকারী মানুষগুলোর লাইফও নাকি হয় মসৃণ, ঝকঝকে। তারা এ্যাকটিভ, হার্ড ওয়ার্কিং আর মনেপ্রাণে খুব হেল্পফুল মানুষই হয়ে থাকেন। যখন দ্বিতীয় আঙ্গুল বুড়ো আঙ্গুলের চাইতে বড় হয় তাদের জীবনে খাদ্য ও বন্ধুত্বের কোনো অভাব হয়না। সোজা কথায় প্রচন্ডরকম সৌভাগ্যবান তারা ।

সাদা ধপধপে নখ একটি স্থিতিশীল জীবনের প্রতীক। ধুসর নখ একটি টাফ লাইফের পরিচায়ক। সবচাইতে সুলক্ষনা নখের রঙ লালচে যা জীবনে ঐশ্বর্য্য ও সাফল্যের নিদর্শন ।

ব্যক্তিত্বের মানুষের মনস্তাত্বিক সম্পর্কের বিষয় ।

অনেকে বলেন ব্যক্তিত্বটা আমাদেরই বানানো একটা স্বভাব মাত্র। আবার অনেকে বলেন, যে কেউ চেষ্টায় যে কোন সময় তার পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আর একটা কথা বলি যার ব্যক্তিত্ব নাই তার সাথে রাস্তার কুকুরের কোন পৃথক নাই। ঝালাই করা কথাটা শুনার পর না হয় আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন আজই ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের চেষ্টা করবো; না কি আরো কয় দিন পর।

বেশি কড়া কথা সাথে এড করি, পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন সাইকোলজি প্রবলেম সম্ভবত নিজেকে জানবার ব্যর্থতা। এখনো ঠিক নিজেকে চিনে উঠতে পারছেন না। ভাবছেন নিজেকে জানার জন্য বা চিনবার জন্যে অন্যের দ্বারস্থ হবেন। প্রয়োজন নাই; আয়নার সামনে দাঁড়ান। নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করুন ; উত্তর পেয়ে যাবেন। আর যদি উত্তর না পান তাহলে বুঝবেন আপনার ভিতরের ভালো বা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রাণীটি মারা গেছে ।

 

 

 

লেখক: সমাজ উন্নয়ন কর্মী ও সংগঠক।  borhan.2012@yahoo.com

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here