কক্সবাজারের বিসিক শিল্পাঞ্চল নানা কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, মালিক -শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব, আর্থিক সংকটসহ নানা অনিয়মের কারণে এ দূরাবস’া সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট লোকজন মনে করেন।
বিসিক সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরতলীর ঝিলংজাস’ লিংক রোড় মহুরী পাড়ায় ১৯৬৪ সালে ২১ দশমিক ৬৯ একর জমি নিয়ে বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন ২২ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৩টি প্লট নির্মাণ করে বিভিন্ন কোম্পানী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৯৩টি প্লটের মধ্যে ৮৯টি বরাদ্দযোগ্য। তৎমধ্যে আইনী জটিলতার কারণে দুটি প্লট ছাড়া ৮৭টি প্লট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, বিসিক শিল্প নগরীতে বর্তমানে ৩১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত থাকলেও নানা কারণে অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে মাত্র ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান ৩টি হলো কুয়িারচর সীফুড, মিনহার সীফুড লিমিটেড এবং কনসেফশন লিমিটেড। ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে এ ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হয়েছে ১৪১কোটি ১০ লাখ টাকা। বিসিকের তালিকায় রুগ্ন শিল্প অথচ নিষ্ক্িরয় এরকম বন্ধ হয়ে গেছে ১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো প্রিমিয়ার সী ফুডস লিমিটেড, এ্যকুয়া ফিশারীজ, সোনালী ফুড প্রোডাক্টসের ২টি ইউনিট, সাগর কোল্ড ষ্টোরেজ লিমিটেড, কক্সবাজার ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড, মেসার্স এম.এ হামিদ এন্টারপ্রাইজ, কক্সবাজার পলিসিন এন্ড প্লাষ্টিক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, এ.রহমান অয়েল মিলস লিমিটেড, স্কয়ার কোর্পরেশন বিডি লিমিটেড, ডুলাহাজারা জেনারেল ফিডস মিলস লিমিটেড।
উক্ত ১২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারী রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। উৎপাদনরত শিল্প হিসেবে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের নাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাস-বে আছে ৩টি প্রতিষ্ঠান। তবে সামপ্রতিক সময়ে আরো ৫টি শিল্প প্রতিষ্টান গড়ে তোলার সিদ্ধান- নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হল বি বীচ লিমিটেডের ২টি ইউনিট, এগ্রোমাকর্স কনজুমার প্রোডাক্টস, ফারুক ফুড ইন্ডাষ্টিজ, বসুন্ধরা টাল, এন্ড রাইচ মিলস এবং মেসার্স দিদার এন্টারপ্রাইজ।
বিসিক শিল্প নগরী সহকারী মহা-ব্যবস’াপক মোহাম্মদ শাহ্জাহান জানান, পাকিস-ান আমলে স’াপিত কার্যালয়টি অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে দাপ্তরিক কাজে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষায় ভবনটিতে পানি প্রবেশ করে। গত বছর ৯ বার ভবনটি প্লাাবিত হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ভবনটির বেশির ভাগ কক্ষে ফাটল ধরায় উৎকণ্ঠায় দাপ্তরিক কাজকর্ম করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি ভবনটি আধুনিকায়ন এবং অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামন করেন।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি ছালামত উল্লাহ খান ও পরিচালক আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বিসিক শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দের সময় আসল উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়নি। যার কারণে আজকে বিসিক শিল্প নগরীতে এ দূরাবস’া সৃষ্টি হয়েছে।
বিসিক সংশ্লিষ্ট লোকজন মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকট, ব্যাংকের মামলা, মালিক-শ্রমিকের দ্বন্দ্ব, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব দূর করতে পারলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে ধ্বংসপ্রায় বিসিক শিল্প নগরী। জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি জেলার লক্ষাধিক বেকারদের কর্মসংস’ান সৃষ্টির জন্য শিল্পসমূহকে সচল করা প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের স্বদিচ্ছার যথেষ্ট প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
কালাম আজাদ, কক্সবাজার