স্টাফ রিপোর্টার :: কবি হাবীউল্লাহ সিরাজী গত ২৪ মে, সোমবার রাত ১১টায় শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
কবির এই চলে যাওয়া কবির অনুরাগী ও বন্ধুমহলে গভীর শোকের ছায়া ফেলে। ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুরের রসুলপুরে হাবীবউল্লাহ জন্ম হয়।
বাবা আবুল হোসেন সিরাজী, মা জাহানারা বেগম। ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক ও রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেন।
গতকাল তার স্মরণ সভায় যোগ দেন কবি মাহমুদ কামাল, কবি ফরিদ আহমেদ দুলাল, কবি ও কথাসাহিত্যিক রোকেয়া ইসলাম, কথাসাহিত্যিক তাহমিনা কোরায়েশী, কথাসাহিত্যিক, মিলা মাহফুজ কবি শাহীন রেজা লেখক ও সঙ্গীত শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, কবি কাজল চক্রবর্তী কথাসাহিত্যিক নাহার ফরিদ খান,কবি নাহার আহমেদ, কবি কুশল ভৌমিক, লেখক হাসান আলী স্মরণ সভায় বক্তারা কবি হাবীউল্লাহ সিরাজীর প্রতি গভীর শদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেন। কবি সিরাজীর মৃত্যু বাংলা কবিতায় এক অপূরণীয় ক্ষতির সৃষ্টি করেছে বলে বক্তারা সকলেই তাকে এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করেন।
বক্তারা কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী কবিত্ব শক্তি, তার কবিতায় বাঁক বদল এবং জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি যে একজন অত্যন্ত অমায়িক ও অসাধারণ মানুষ এ বিষয়টি বারবার বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে। তার মতো এতো ভালো মানুষ আর আসবেন কি না এভাবে মানুষকে কাছে টেনে নিবেন কি না এ বিষয়টিও সকলের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে।
তিনি বাংলা একাডেমিতেও বেশ কিছু ভালো কাজ শুরু করেছিলেন তার মতো ব্যক্তিত্বের বাংলা একাডেমিতে আরো বেশিদিন থাকার প্রয়োজন ছিলো এবং তিনি আরো বেশিদিন থাকলে বাংলা কবিতা এবং বাংলাসাহিত্য আরো সমৃদ্ধ হতেন।
স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন কবি ও কথাসাহিত্যিক নূর কামরুন নাহার। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুরে তার জন্ম। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক পাস করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাহিত্য চর্চা করতেন। কবিতাই তাঁর প্রধান ক্ষেত্র। তবে অনুবাদ, প্রবন্ধ, শিশুতোষ রচনা আর উপন্যাসও রচনা করেছে তিনি।
গত শতকের আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। আশির দশকে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
কবিতার জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯১ সালে পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৭), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), বিষ্ণু দে পুরস্কার (২০০৭), রূপসী বাংলা পুরস্কার (২০১০), মহাদিগন্ত পুরস্কারসহ (২০১১) বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। পদ্য-গদ্য মিলিয়ে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৫০টির অধিক।
লিখেছেন উপন্যাস, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথাও। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হলো- ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’,‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’, ‘মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাশ’, ‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’, ‘আমার একজনই বন্ধু’, ‘পোশাক বদলের পালা’, ‘প্রেমের কবিতা’,‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘সিংহদরজা’, ‘জয় বাংলা বলোরে ভাই’, ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’, ‘কতো কাছে জলছত্র’, ‘কতোদূর চেরাপুঞ্জি’ ‘ভুলের কোনো শুদ্ধ বানান নেই’ ইত্যাদি। হাবীবুল্লাহ সিরাজীর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- ‘কৃষ্ণপক্ষে অগ্নিকাণ্ড’, ‘পরাজয়’, ‘আয় রে আমার গোলাপজাম’, অনুবাদ ‘মৌলানার মন : রুমীর কবিতা’, আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমার কুমার’, গদ্যগ্রন্থ ‘দ্বিতীয় পাঠ’, ‘মিশ্রমিল’, ‘গদ্যের গন্ধগোকুল’, শিশুসাহিত্য ‘ইল্লিবিল্লি’, ‘নাইপাই’, ‘রাজা হটপট’, ‘ফুঁ’, ‘ফুড়ুত্’, ‘মেঘভ্রমণ’, ‘ছয় লাইনের ভূত’ ও ‘ছড়াপদ্য’।