প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ছাড়াই নবম জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশন শুরু। অধিবেশনে যোগ দিতে বিরোধী দলের প্রতি স্পীকারের আহ্বান। বুধবার নবম জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তব্যে স্পীকার আব্দুল হামিদ এ্যাডভোকেট এই আহ্বান জানান। বিকেল সাড়ে তিনটায় স্পীকারের সভাপতিত্বে শুরু হয় এই অধিবেশন।
স্পীকারের উদ্বোধনী পূর্ণ ভাষণ: আস্সালামু আলাইকুম। মাননীয় সদস্যবৃন্দ, আজ ২৫ জানুয়ারি। ২০০৯ সালের এ দিনেই নবম জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ইতোমধ্যে বর্তমান সংসদ তিন-বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে। বর্তমান সংসদের তিন-বছর পূর্তিতে আমি সকল মাননীয় সংসদ-সদস্য ও তাঁদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। একই সাথে জানাচ্ছি ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জণগনের প্রত্যাশা অনুযায়ী ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু। তাই এ সংসদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বেশী। বিগত তিন বছরে সংসদের মোট কার্যদিবস ছিল ২৫৪ দিন। মাননীয় সংসদ-সদস্যগণ এসব কার্য দিবসের বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ সময়ে জনস্বার্থে ১৫৩টি আইন পাস করা হয়েছে। এসব আইনের বাস্তবায়নের ফলে জনগণ উপকৃত হচ্ছে। ৭২৩ জন মাননীয় সংসদ-সদস্য তিনটি বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বাজেটকে আরো গণমুখী ও বাস্তবধর্মী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টোরি ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের সদস্যপদ পুনর্বহাল এ সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদীয় গনতন্ত্রে সরকারি কর্মকান্ডের জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সবগুলো স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিগুলো ইতোমধ্যে প্রায় দেড় হাজার বৈঠকে মিলিত হয়েছে।
মাননীয় সদস্যবৃন্দ,
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সতন্ত্র টেলিভিশন চ্যানেল ‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’ বছর পেরিয়ে আজ দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করল। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের বর্ষপূর্তিতে আমি আপনাদের মাধ্যমে সকল দর্শক-শ্রোতা, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সার্বিক সহযোগিতায় ‘সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন’ নিরবচ্ছিন্নভাবে সংসদ কার্যক্রম সম্প্রচার করছে। এতে দেশের জনগণ সংসদীয় রীতিপদ্ধতি ও সংসদে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে সংসদ অধিবেশনকালীন সময় ব্যতিত অন্যান্য সময়ে সন্ধ্যা ০৬টা থেকে রাত ০৮টা পর্যন্ত সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে এবং ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে সম্প্রচার সময় বাড়ানো হবে।
বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদকেও ই-পার্লামেন্টে রূপান্তরের সার্বিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাউন্ট-ডাউন সিস্টেম চালু করা হয়েছে, ম্যানুয়েল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ও নোটিশের লটারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাননীয় সংসদ-সদস্যদের ঢাকায় অফিস বরাদ্দের পাশাপাশি ইন্টারনেট সুবিধাসহ কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া মাননীয় সংসদ-সদস্যগণ যাতে নিজেরাই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম হতে পারেন সে লক্ষ্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমি আশা করবো যাঁরা এখনও প্রশিক্ষণ নেননি তাঁরা এ সুযোগকে কাজে লাগাবেন। নবম জাতীয় সংসদে ১১৩টি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের মাধ্যমে ২২৫ জন মাননীয় সংসদ-সদস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেছেন। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
মাননীয় সদস্যবৃন্দ,
সংসদ কার্যক্রমে মাননীয় সংসদ-সদস্যদের সক্রিয় অংশ গ্রহণই একটি সংসদকে নিয়ে যেতে পারে সাফল্যের চূড়ায়। তাই বিগত দিনে সংসদ কতটুকু কার্যকর ছিল বা কতটুকু সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে তার মূল্যায়ন করবেন আপনারা এবং দেশের জনগণ। নবম জাতীয় সংসদ বিগত তিন-বছরে জনস্বার্থে আইন প্রণয়নসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা পূরণে সংসদে ফলপ্রসু অনেক আলোচনা হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে দেশের জনগণ উপকৃত হয়েছে এবং গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছে। বিগত তিন-বছর সংসদ পরিচালনায় মাননীয় সংসদ-সদস্যগণ আন্তরিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। সংসদের যেটুকু সাফল্য তার সবটুকুই আপনাদের। আমি আশা করব, আগামী দিনগুলোতে দলমত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতায় জাতীয় সংসদকে দেশ ও জনগণের আশা আকাংখা পূরণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করতে সক্ষম হবো। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে এসে জনগণের কথা বলা মাননীয় সংসদ-সদস্যদের পবিত্র দায়িত্ব। তাই আমি আশা করব সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যগণ জনপ্রত্যাশা পূরণে সংসদকে সকল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে অব্যাহত প্রয়াস চালাবেন।
মাননীয় সদস্যবৃন্দ,
সংসদ জাতীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। কারণ সংসদ জনগণের। জনগণের চাওয়া-পাওয়া ও তাদের প্রত্যাশিত চাহিদা পূরণের জন্য সংসদই হচ্ছে প্রধান ক্ষেত্র। সংসদকে কাজে লাগিয়েই সরকারি ও বিরোধী দলের মাননীয় সদস্যগন তাঁদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে এগিয়ে যেতে পারেন। সংসদ কার্যকর থাকলেই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুসংহত হয়। সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে বিরোধী দল সরকারের ভুলক্রুটি ধরিয়ে দিতে পারে এবং সরকার পরিচালনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। আমি প্রধান বিরোধী দলের মাননীয় সংসদ সদস্যগণকে অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। রাজনীতিতে মত ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু জাতীয় স্বার্থে একে অন্যের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করবে নতুন বছরে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
মাননীয় সদস্যবৃন্দ,
স্পীকার হিসেবে আমার মূল দায়িত্ব হচ্ছে সংসদ কার্যক্রম পরিচালনা করা। এক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের সকল সংসদ-সদস্যই আমার কাছে সমান। অতীতের সকল বাধা-বিপত্তি ও ব্যর্থতাকে মুছে ফেলে নতুন উদ্যোগে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করব এ প্রত্যাশা রেখে আমি এখন দিনের কার্যসূচী অনুযায়ী আজকের অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু করছি।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/স্টাফ রিপোর্টার