আহমেদ ইসমাম:: প্রায় অর্ধ যুগের বেশি সময় এলাকায় ছিলাম না। নানাবিধ সমস্যা ও বিশেষ করে পারিবারিক সংকটে আবারো দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি। স্বাভাবিক ভাবেই অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। চোখে পড়ার মত পরিবর্তন হয়েছে সামাজিক ও অর্থনীতির। মানুষ এখন আগের থেকে উন্নত জীবনযাপন করলেও সামাজিক পরিবর্তনটা ইতিবাচক নয়।
আসলে সমাজ কি? সমাজ বলতে আমি যেটা বুঝি সকলের সব কিছুর সমতা। ধর্মও সেই কথাই বলে। বিশেষ করে ইসলাম।
কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য যে এখানে ইসলামের নামে যা হচ্ছে তা মোটেও ইসলাম নয়। বিশেষ করে বিবাহ বন্ধনের বিষয়টি। এখানে বিয়ে ক্ষেত্রে যৌতুকের নামে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হচ্ছে। যা মোটেও ইসলাম সমর্থন করে না বলে আমি মনে করি।
বেশির ভাগ সময় মেয়েদের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রাধান্য দেওয়া হয় না। তাকে বুঝানো হয় ছেলে চাকরি করে তুমি সুখে থাকবা এটা নিশ্চিত। এর পরে কয়েক ঘন্টার সিদ্ধান্তে তাকে একটি অচেনা ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অনেকটা ক্ষুধার্থ বাঘের মুখে কচি হরিনের বাচ্চা পড়ে গেলে যা হয়।
এখানে আপনি চাইলেও মোটা অংকের যৌতুক পাবেন না। এটা পাওয়ার জন্য অবশ্যাই আপনাকের অর্জন করতে হবে সরকারি চাকরি নামে সোনার হরিণের। ব্যাস… হয়ে গেল। এখন আপনি চাইলেই পেয়ে যাবেন মোটা অংকের যৌতুক।
কালভেদে তা ১০ লাখ, ২০ লাখ, ৩০ লাখ পর্যন্ত। মজার ব্যপার হচ্ছে এই চাকরি আপনি কয় টাকা ঘুষ দিয়ে নিয়েছেন সে প্রশ্ন কেউ করবে না।
নোট: ক্ষেত্র বিশেষে দেখা গিয়েছে বিয়ে করলে তো যৌতুক পাবই তাই ধার করে ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছে।
আমি দেশের প্রায় সব জেলায় ঘুরেছি, থেকেছি খেয়েছি কিন্তু কোন জায়গাতেই এমন নগ্ন ভাবে যৌতুকের কথা শুনি নাই।
আরে, বাবা হাজি ও ইসলামি ডিগ্রি আছে পাচ ওয়াক্ত নামাজ ও রোজা রাখে এমন মানুষ তার মেয়েকে মোটা অংকের যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগে।
শৈশবে প্রায় সময় মাইকে বাপ্লিসিটি বাপ্লিসিটি করে আওয়াজ শুনতে পেতান। তাতেই বুঝে যেতাম সন্ধার পরে বাজারের কোন ফাকা জায়গায় বড় পর্দায় সিনেমার মত কিছু একটা দেখাবে। সেই লোভেই পড়া ফাকি দিয়ে সময় মত হাজির। খুব মনে আছে সেই বড় পর্দায় দেখানো হত যৌতুকের কুফল। বুঝানো হত এটা একটা সামাজিক ব্যধি। অনেক সময় মঞ্চ নাটকেও হাসি তামাসার মাধ্যমে এ সব বুঝানো হত।
এখন আর এ সব চোখে পড়ে না। এখানে অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে গেছে। যাদের যৌতুকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথা ছিল তারাই এখন যৌতুকের জন্য লাইন ধরছে। যাদের এর কুফল নিয়ে পড়ানোর কথা ছিল তারাই ধর্মিয় বেড়া সরিয়ে যৌতুকের জন্য হাত পেতে রাখছে। বিশেষ করে শিক্ষকরা এটার সাথে বেশি জরিত। আমার দেখা প্রায় শতভাগ যৌতুকের সাথে জরিত। আসলে এদের উচিত ছিল এটা বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
আসুন আমরা লোকজনের ভিড়ে মানুষ হই।
লেখক: সংবাদকর্মী