কাজী মোসাদ্দেক হোসেন, গাজীপুর:

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে লাখো মুসল্লি একসঙ্গে হাত তুলে মুসলিম জাহান ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনা করে প্রার্থনা করেছেন। রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব তাবলিগ জামাতের এবারের ইজতেমা। মোনাজাত পরিচালনা করেন ভারতের মাওলানা মো. জোবায়রুল হাসান। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস’া ছিল
এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে।

গত সপ্তাহে প্রথম পর্বের পর শুক্রবার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। আগে এক পর্বে ইজতেমা হলেও মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গত বছর থেকে তা দুই পর্বে হচ্ছে, ফলে আখেরি মোনাজাত হচ্ছে দুই বার। রোববার ভোর থেকেই ইজতেমা ময়দান অভিমুখে মানুষের ঢল নামে। শনিবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। মোনাজাতে অংশ নিতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হেঁটেই রওনা হন ইতজেমাস’লে। সকালেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা মাঠের আশে-পাশের রাস-া, অলি-গলিতে অবস’ান নেয়। পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস-া ও পলিথিন বিছিয়ে যে যেখানে পারছেন, বসে পড়েন এবং মোনাজাতে অংশ নেন।

ইজতেমাস’লে শনিবার রাতে পাবনার এক মুসল্লি হৃদরাগে মারা যান বলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তার নাম মো. আব্দুস সামাদ (৬২)। এদিকে ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম দিকে নামাজ আদায়ের মিম্বরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে হারানো-প্রাপ্তির কামরা রয়েছে। সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলার ১০ জন মুসল্লি সঙ্গী-সাথীদের হারিয়ে সেখানে অপেক্ষা করছেন। ময়দানে মুসল্লিদের হারানো টাকা, মোবাইল, জিনিসপত্রের ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স-ূপও দেখা গেছে সেখানে। হারানো ও প্রাপ্তির বিষয় বয়ান মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রমাণ দিয়ে তা অনেকেই নিয়ে যাচ্ছেন বলে ওই কামরায় কর্তব্যরত তাবলিগকর্মী মো. আল আমিন জানান। তিনি বলেন, রোববার সকাল ৮টা পর্যন- ৩০০জনের মতো মুসল্লি মাঠে হারিয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গী-স্বজনদের কাছে পোঁছে দেওয়া হয়েছে। নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলসের গভীর নলকূপ নষ্ট হয়ে পড়ায় গত দু’দিন ধরে ওই এলাকায় তীব্র পানির সঙ্কট ছিল। ওই এলাকায় জেলা প্রশাসন, টঙ্গী পৌরসভা ও র‌্যাবসহ বেশ ক’টি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পানি নিয়ে ভোগানি-তে রয়েছেন।

তাদের প্রয়োজনীয় পানি বাইরে থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া। ইজতেমার কারণে ধউড় সেতু থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে প্রগতি সরণী এবং টঙ্গী সেতু থেকে গাজীপুর চৌরাস-া পর্যন- বিমানযাত্রী, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। ১৯৪৬ সাল থেকে বাংলাদেশে (তৎকালীন বাংলা) বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুরুতে ইজতেমা হতো ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। এরপর ১৯৪৮ সনে চট্টগ্রামের হাজি ক্যামেপ এবং ১৯৫৮ সন-এ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ইজতেমায় লোক সমাগম বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সনে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন। এরপর থেকে এখানেই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here