ইমা এলিস/বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ::
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের সাধারণ ছুটি বাতিল করায় আজ বৃহস্পতিবার (১৫ অগাস্ট) বিশ্বের ৫৮টি দেশে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশন (দূতাবাস/হাইকমিশন/কনস্যুলেট জেনারেল/কনস্যুলেট/উপ-হাইকমিশন/ সহকারী হাইকমিশন) খোলা থাকবে, তবে পালন করা হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে এই দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসাবে পালিত হত। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশের পরিস্থিতি বদলে গেছে।
মঙ্গলবার (১৩ অগাস্ট) প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে ব্যাপক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঘোষিত ১৫ অগাস্টের সাধারণ ছুটি বাতিলের বিষয়টি অদ্যকার উপদেষ্টা মণ্ডলীর বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।’
বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে বাংলাদেশের ৭৭টি মিশন (দূতাবাস, হাইকমিশন, কনস্যুলেট জেনারেল, কনস্যুলেট উপ-হাইকমিশন ও সহকারী হাইকমিশন) রয়েছে। বিশ্বের ১৪টি দেশে মোট ১৭টি দূতাবাসের নিজস্ব ভবন রয়েছে। এরমধ্যে এশিয়ায় ৫টি দেশে ৬টি, ইউরোপে ৭ দেশে ৭টি, আফ্রিকায় ১টি, উত্তর আমেরিকায় ৩টি নিজস্ব মিশন রয়েছে। এছাড়াও নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরে বাংলাদেশের মালিকানাধীন জমি রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাকিস্তান, ভূটান, ব্রুনাই, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ও সৌদি আরবে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।
নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেটের কন্সাল জেনারেল নাজমুল হুদা জানান ১৫ অগাস্ট অফিস খোলা থাকবে। বন্ধ রাখার জন্য ঢাকা থেকে কোন নির্দেশনা তারা পাননি।
স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিকের হাতে সপরিবারে জীবন দিতে হয় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। তার পরিবারের ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা নারীও সেদিন ঘাতকের গুলি থেকে রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার শুরু হয়। সেই সঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করে।
এরপর থেকে আবার আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়েই দিনটি পালিত হয়ে আসছিল। ২০০৮ সালে হাই কোর্ট এক রায়ে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। এরপর পুনরায় ক্ষমতায় ফেরা আওয়ামী লীগ ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।
গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ পুরো আগস্ট মাস জুড়ে শোক পালনে নানা কর্মসূচির আয়োজন করত। এবারও
সেরকম ঘোষণা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান।
এরপর দেশের আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য।
এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে দেশ ছাড়েন। তৃনমূলের নেতাকর্মীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে অগাস্ট জুড়ে ঘোষিত শোকের মাসের কর্মসূচিগুলো আর হচ্ছে না।
এরই মধ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সোশ্যাল পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিলো স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতিবহনকারী এই জাদুঘরটি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সকল ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফল ও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।’