কামরুল হাসান, কলারোয়া প্রতিনিধি ::
নিম্নচাপজনিত টানা চারদিনের বিরামহীন বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কলারোয়া।দমকা হাওয়ার সাথে ভারী ও অতিভারী বৃষ্টিতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ফসলি মাঠ, মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী বিপাকে পড়েছেন ।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কলারোয়ায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৭ মিলিমিটার, যা চলতি বছরে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত। সোমবার দুপুর থেকে এ অবস্থার উন্নতি হওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে সেটি দেখা যাচ্ছেনা।
কলারোয়া বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক রাশেদুল হাসান কামরুল জানান, তাঁর স্কুল প্রাঙ্গণ, বারান্দা ও ক্লাসরুমে পানি ঢুকে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমনকি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড মির্জাপুরের বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেকের বাড়ির উঠানে পানি উঠেছে।
মির্জাপুর গ্রামের সোহেল হোসেন রফু, পশ্চিমপাড়ার জাকির হোসেন, শেখপাড়ার আব্দুস সাত্তার, দক্ষিণপাড়ার হাবিবুর রহমানসহ মির্জাপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ও পানি নিষ্কাশন রুদ্ধ হাওয়ায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এলাকাবাসী পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ মোকাবিলা করেন।
বেত্রবতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মির্জাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল জলমগ্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলের যাতায়াতসহ লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। গোটা পৌর এলাকার চিত্র প্রায় অভিন্ন। উপজেলা পরিষদ ও এর আবাসিক এলাকার অনেক স্থানে পানি ঢুকে পড়েছে বলে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান।
কলারোয়া আলিয়া মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আহম্মদ আলী জানান, মাদরাসা প্রাঙ্গণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষক ও ক্রীড়া সংগঠক শেখ শাহাজাহান আলি শাহিন জানান, মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। তুলসীডাঙ্গার অনেক বাড়ির আঙিনা ও বাড়িঘরে ঢুকে পড়া পানি নামছেই না। তুলসীডাঙ্গার মনিরুল ইসলাম টিটু জানান, তাঁর ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। ঘরবাড়ি জলমগ্ন থাকায় তাঁরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছেন। একই গ্রামের একজন শ্রমজীবী জানান, বাড়িতে পানি ও আশপাশের রাস্তায়ও পানি। চলাফেরার উপায় নেই। বৃষ্টির কারণে ঘরবন্দি থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গত তিনদিন কাজ নেই, নেই আয়ও। সংসার নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি ও তাঁর মতো শ্রেণিপেশার মানুষ।
মাছের ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল হক সাংবাদিকদের জানান, অনেকের মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। কেউ কেউ নেট-পাটা দিয়ে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করছেন। কারো কারো ঘের-পুকুরের আইল সমান পানি থই থই করছে।
কলারোয়ার জালালাবাদ ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান, ইউপি সদস্য মোজব্বার হোসেন। তিনি জানান, ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাঁটরা গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে। রাস্তার উপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে। ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। শীতকালীন ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাঁটরা গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উত্তর বাঁটরা সরকারি প্রাইমারি স্কুল জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে।
মোজব্বার হোসেন আরও জানান, শংকরপুর ও আহসান নগর সরকারি প্রাইমারি স্কুলও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এইচএম রোকনুজ্জামান জানান, তিনি পুটুনি ও শংকরপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের জলমগ্ন হয়ে পড়ার তথ্য পেয়েছেন। অন্য স্কুলের জলমগ্নতার তথ্য তিনি এখনো পাননি বলে জানান।