আরিফ চৌধুরী শুভ :: সমতলে পুলিশি বাধা, উপর থেকে ভারী বৃষ্টি তবুও রাজপথ দখল করে রেখেছে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা। গতকালও যে সহপাঠিরা একসাথে পাশাপাশি বসে ক্লাস করেছে, আড্ডা দিয়েছে, আজ তাদের খুঁজেতে হচ্ছে স্মৃতির এলবামে। পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে আছে শোকের ছায়া আর হাহাকার। রাস্তায় এখনো লেগে আছে নিহতদের শরীরের রক্তের দাগ।
কে দেবে কাকে সান্তনা। এইসব যেন সহপাঠিদের আরো প্রতিবাদী করে তুললো। সহপাঠিরা কিছুতেই ভুলে যেতে পারছেন না গতকালের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কথা। বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে অনেকের। সন্তানের চোখের অশ্রু মুছতে গিয়ে মাও হয়ে যাচ্ছেন অশ্রুন্সিক্ত। স্থির হয়ে আসে কণ্ঠ। আবেগের কাছে অসহায় জীবন আর বাস্তবতা।
কোন ব্যনার নাই। মেয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ওড়নায় কলমের কালি দিয়ে লিখলো বিচার চাই। সোমবার সকালে ক্লাসে না ফিরেই রাস্তায় নেমে পড়লো শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিভাবকরাও যোগ দিয়েছেন এই প্রতিবাদে।
প্রতিবাদের মিছিল ক্রমেই লম্বা হতে লাগলো। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চাপায় শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদের এই মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। শুধু শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরাই নয়, তাদের সাথে যোগ দিয়েছে আদমজী স্কুল, কুর্মিটোলা শাহীন, বিএফ শাহীন, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পুরো এলাকা শিক্ষার্থীদের দখলে চলে যায়। হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয় এই মানববন্ধনে। মুহুমুহু স্লোগানে উত্তপ্ত রাজপথে চোখের জল মুছতে মুছতে অনেকেই মানববন্ধনে দাঁড়ান। কারো কান্নাই যেন কোন ভাবে থামছে না।
সবার মুখে একটাই প্রশ্ন আজ আমরা কোথায় নিরাপদ? এভাবে অার কত প্রাণ দিলে সড়ক হবে নিরাপদ। শিক্ষার্থীদের নিভৃত করতে রাস্তার পাশে পুলিশের উপস্থিতি বাড়তে লাগলো। রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে অবস্থান নিল সেনা সদস্যরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একপর্যায়ে বাঁধা দিতে শুরু করলো পুলিশ। শিক্ষার্থীদের অনেকে জোর করে বাসে তুলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে পুলিশ।
কেউ যেন ভীত নয়। স্লোগানে স্লোগানে কাঁপিয়ে দিল বিমানবন্দর সড়ক। সৃষ্টি হলো দীর্ঘ জ্যাম। পুলিশের গাড়িও আটকিয়ে দিলো শিক্ষার্থীরা। যেই আসছে তাদের কাছে সবার কাছেই একটাই আওয়াজ তুলছে হাজারো তরুণ কণ্ঠ ‘বিচার চাই, বিচার চাই, ছাত্র হত্যার বিচার চাই’।
উল্লেখ্য, গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭ ও ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৬৫৭) মিরপুরের দিক থেকে বিমানবন্দর সড়কের দিকে আসার পথে ফ্লাইওভারেই একে অপরকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। পাল্লা দিয়েই বাস দুটি ফ্লাইওভার থেকে নামছিল।
উড়াল সড়কের গোড়ায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল, কয়েকজন দেয়ালের পাশ ঘেঁষে হেঁটে যাচ্ছিল সামনের দিকে। ঠিক ওই মুহূর্তে ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭ নম্বর গাড়িটি চাপা দেয় শিক্ষার্থীদের। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী নাদিয়া খানম মীম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। আহত হয় সজিব, আরিসা আক্তারসহ ১০-১২ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।