বাংলাদেশ ভারত-সীমান্তে গুলিবর্ষণ নিয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মহাপরিচালকের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
বিএসএফের মহাপরিচালক ইউ কে বনসাল আন্তজাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেয়াএকান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, যতদিন পর্যন্ত সীমান্তে অপরাধ বন্ধ না হচ্ছে, ততদিন সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধ করা কখনোই সম্ভব না।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সীমান্তে গুলিবর্ষণ এবং নির্যাতনের বিষয়ে যখন আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা হচ্ছে তখন বিএসএফের এ বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য গভীর উদ্বেগজনক।
সীমান্তে হত্যাকান্ড নিয়ে বেশ অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সমালোচনা করে আসছিল।
কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় বিএসএফ সদস্যদের বিচার দাবী করে একটি বিবৃতি দেয়।
ভারত সরকার থেকে বেশ কয়েকবার সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সীমান্তে নিয়মিতভাবেই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার আন্তজাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেয়াএকান্ত সাক্ষাৎকারে বিএসএফের মহাপরিচালক ইউ কে বনসাল বলেন, অপরাধ দমনে বিএসএফের এধরনের গুলিবর্ষন বন্ধ করা কখনোই সম্ভব নয়।
“গুলি চালানো কখনোই বন্ধ করা সম্ভব না, যতক্ষন পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকান্ড হতে থাকবে, ততদিন সেই অপরাধ আটকাতেই হবে বিএসএফকে।এটাই বাহিনীর দায়িত্ব।” বলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক ইউ কে বনসাল।
বিএসএফ প্রধানের এ বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্র তাদের বিবৃতিতে বলেছে, বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশ যখন সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধের চেষ্টায় লিপ্ত, ঠিক এই সময়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের এমন উক্তি এ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করবে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলছিলেন, বিএসএফের এ বক্তব্য উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, “সীমান্তে সমস্যা থাকতে পারে। তবে আমাদেরকে এমন পথ ঠিক করতে হবে যাতে কোন প্রাণহানি না হয়। সেখানে যদি সরাসরি বলা হয় যে, কোনভাবেই গুলি বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে সেটি অবশ্যই দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক এবং উদ্বেগের বিষয়।”
কিছুদিন আগে বিএসএফ সদস্যদের হাতে একজন বাংলাদেশীর নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রকাশ হলে তা বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এর আগেও গতবছর বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীর গুলিবিদ্ধ হয়ে সীমান্তের কাটাতারে ঝুলে থাকার চিত্র নিয়ে বাংলাদেশে বিক্ষোভ হয়।
বিএসএফের পক্ষ থেকে সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে গুলিবর্ষণের কথা বলা হলেও একথা মানতে নারাজ মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেন, সীমান্তে চোরাচালান এবং অপরাধের ঘটনা অনেক দেশে দেখা গেলেও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এমন আক্রমনাত্মক মনোভাব কোথাও দেখা যায়না।
“পৃথিবীর বহু সীমান্তেই অপরাধমূলক ঘটনা হয়, সেখানে কি এভাবে গুলি করে মানুষ মারে আগ্রাসী ভূমিকা থাকার কারণেই তারা এটা করতে পারছে। ভারতের সাথে চীন, পাকিস্তান এবং বার্মারও সীমান্ত আছে। সেখানে কি তারা এটা করতে পারছে? কিন্তু বাংলাদেশের সাথে এটা করছে।”
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত সীমান্ত হিসেবেও অভিহিত করেন মি. খান।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতবছর বাংলাদেশ সফরে এসে সীমান্তে কোন অবস্থাতেই গুলিবর্ষন হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এর আগে ভারত সরকার থেকে সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যাবহারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও গত দুই মাসেই বিএসএফের গুলিতে অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশী হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/আন্তর্জাতিক ডেস্ক