৭১’ এর কথা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তখন নক্সাল আন্দোলন তুঁঙ্গে। নক্সাল আন্দোলনে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস শাসিত সরকার জেরবার। কখন কোথায় কি ঘটে তার আগাম খোঁজ পেতে গোয়েন্দারা ব্যর্থ। সম্ভবত তখন সিদ্দার্থ শংকর রায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। নতুবা গভর্নর। আমি আসামের ধুবড়ী স্টেশন থেকে কলকাতা যাচ্ছি। অনেক লম্বা সফর। একসময় ট্রেন থামলো নক্সালবাড়ী স্টেশনে।
আমি তখন নবমশ্রেনীর ছাত্র। সর্বহারা আন্দোলন সর্ম্পকে আমার তেমন ধারনা নেই। তাছাড়া আমি তখন ভারত সরকারের শরনার্থী। ট্রেনে চড়তে পয়সা লাগে না। যাক নক্সালবাড়ী স্টেশনে নেমে দুআনা দিয়ে মাটির কাপে সকালের চা খাচ্ছি। স্টেশনের বাইরের একটি দেয়াল লিখন আমার চোখে পড়লো।
তাতে লেখা শাসকগোষ্ঠির রাইফেলের গুলী ফুঁরিয়ে যাবে। দেশের জনগন শেষ হবে না। নীচে লেখা চারু মজুমদার।
৭০’ দশকে ভারত কাঁপানো নক্সাল আন্দোলন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এমন সুন্দর কথা বলে নক্সাল আন্দোলনে দেশের হাজারো ছেলে মেয়ে জড়িয়ে পড়ে নক্সাল আন্দোলনে। ফলে প্রশাসনের পক্ষে সে আন্দোলন সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে।
এরই মাঝে একসময় চারু মজুমদারের নৃশংস মুত্যু হয়। তারপর নক্সাল আন্দোলন দমে যায়। চারু মজুমদারের সেই বানী যেমন আজো আমার মনে আছে,তেমনি আরেকটি লেখা আমার আজো মনে আছে হুবহু। সেটি হাওড়া ব্রীজের সামনে।
তাতে লেখা ছিল সব জো্যতিষী বারবার,অমৃত লাল একবার। দেয়ালের এ দুটো লেখা আমার স্মৃতি পটে জ্বলজ্বল
করছে। আন্দোলন ব্যার্থ হবার পরিনাম যে কি ভয়াবহ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতে গিয়ে নক্সালীদের না দেখলে কেউ বুঝবেই না। মাঝখানে অনেক তাজা প্রান ঝড়ে গেল। অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র হারিয়ে গেল। কবর হলো নক্সাল আন্দোলনের।
বেগম জিয়া আবারো তৃতীয়বারের মত আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, এবার তিনি মাঠে থাকবেন।
দুটি ঈদকে উপলক্ষ করে দুটি আন্দোলন ব্যার্থ হবার পর এবার তৃতীয় বারের মত জানুয়ারীতে মাঠে নেমে সরকারের পতন ঘটাবেন। আমরা যারা ৫ই জানুয়ারী পুর্ব আন্দোলন দেখেছি, সে আন্দোলন দেখতে চাইনা।অহিংস আন্দোলন যেন অহিংস থাকে। সহিংস না হয়। সহিংস হলে নেতাদের ছেলেরা মরে না। মারা যায় সাধারন মানুষের ছেলে মেয়েরা।
ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারন মানুষ। যাদের ক্ষতি হয়,তাদের অপুরনীয় ক্ষতি নিয়ে আমরা ভাবি না। টেলিভিশনের কল্যানে
আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ লোকের বর্ননা শুনি। আমরা ক্ষমতায় যাবো না। হালুয়ারুটি খাবো না। আমরা কেন ক্ষতিগ্রস্থ হবো। যাক যে কথা বলছিলাম, বেগম জিয়া ও তার ২০ দলীয় জোট আগামী জানুয়ারীতে সরকার পতনের তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন। আমরা যারা সাধারন মানুষ তারা দুবেলা দুমুঠো ভাত পেলেই খুশি। আন্দোলন করে আমাদের লাভ নেই।
হয়তো ক্ষমতায় যাবেন শেখ হাসিনা,না হয় বেগম খালেদা জিয়া। নতুবা তৃতীয় পক্ষ কেউ। রাস্তায় বেঘোরে সাধারন মানুষ প্রান দিবেন, আর তারা ক্ষমতায় গিয়ে হালুয়া রুটি খাবেন-এটা আমরা সাধারন মানুষ বারবার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আপনারা যত খুশি আন্দোলন করুন,আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের বলিরপাঠা বানাবেন না।
সমপ্রতি নারায়নগঞ্জের সভায় আপনি বলেছেন, গ্যাস ওবিদ্যুৎ এর দাম বাড়ালে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এটা খুব ভাল কথা। জনগনের ভোগান্তি নিয়ে আপনি আন্দোলনের ডাক দিবেন, এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। বিগত ৬ বৎসরে বিদ্যুৎতের দাম ৭/৮ বার বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমছে,তখন বিদ্যুতের দাম ঘন ঘন বাড়ালে সাধারন মানুষের ভোগান্তি বাড়াই স্বাভাবিক। কিন্তু গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও যদি সাধারন মানুষ নিরবতা পালন করে তবে বুঝতে হবে সাধারন মানুষের ক্রয়
ক্ষমতার মধ্য আছে। সেজন্য তারা আন্দোলনে নামছে না। আর যদি সাধারন মানুষ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর ক্ষুব্দ হয়, তবে আপনার ডাকের জন্য কেউ বসে থাকবে না।আর যদি ক্ষমতায় যাবার জন্য আপনি আন্দোলনের ডাক দিয়ে থাকেন,তবে দলীয় কর্মীদের ব্যাপারে একটু চিন্তা করবেন। ওরা মামলায় জর্জরিত। আপনার জানুয়ারীতে আন্দোলনের ডাকে কর্মীদের নামে বিভিন্ন থানায় জমে থাকা মামলা দ্রুত অভিযোগপত্র আকারে আদালতে যাচ্ছে।
অচিরেই মামলাগুলো গতি পাবে। জেলা উপজেলায় নেতা কর্মীদের নামে শতশত মামলা ঝুলছে এ অবস্থায় কর্মীরা কতটুকু তৎপর হবে আন্দোলন সংগ্রামে সেটা সময়েই বলে দিবে। আপনি বলেছেন দেমের মানুষ ভাল নেই। শান্তিতে নেই। তাই যদি হতো,তবে ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের পর মহাজোট ক্ষমতায় আছে। একই কায়দায় নির্বাচন করে আপনি ছিলেন মাত্র ১৫ দিন। কথাটা মাথায় রাখবেন।
দেশের জনগন যদি ভাল না থাকে,তবে কোন শক্তিই জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারন বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস নয়। নক্সাল নেতা চারু মজুমদার যেমন বলেছিলেন শাসক গোষ্ঠীর রাইফেলের গুলী ফুঁড়িয়ে যাবে। দেশের জনগন শেষ হবে না। আর যদি ক্ষমতায় যাবার জন্য আন্দোলন করে সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চান তাহলে চারু মজুমদারের মত আন্দোলনের খেই হারিয়ে ফেলবেন। প্রান যাবে হাজারো তরুনের। লাভ হবে শেষ মেষ
ক্ষমতাশীনদের- একথাটা মনে রাখবেন।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল:০১৭১৩৮১৯২৯৪
তারিখ:১৮/১২/১৪