রাজশাহী: আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাস্তবসম্মত জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তবেই রাজশাহী মহানগরীকে মেধার নগরী হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।
এজন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের নিজ সন্তানদের প্রতি আরো যত্নবান হতে হবে। যাতে করে তারা ভবিষ্যতে দেশ গড়ার ক্ষেত্রে মূল নেতৃত্ব দিতে পারে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত করতে সক্ষম হয়।
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও মেয়র শিক্ষা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে শনিবার এসব কথা বলেন রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। অনুষ্ঠানে মহানগরীর ৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯৮৩ জন কৃতী ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
নগর ভবনের গ্রীন প্লাজায় প্রধান অতিথির বক্তব্য মেয়র বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি বর্তমান পরিষদ সর্বসত্মরের শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের লক্ষে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
যা তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আজ তারা যে, বুক ভরা দেশ প্রেম নিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা যেন সফলকাম হয়। শুধু তাই নয় আমরা বিশ্বাস করি এই শিক্ষার্থীরাই আগামীতে রাজশাহী মহানগরীকে আরো সমৃদ্ধশালী মহানগরী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
মেয়র আরো বলেন, রাজশাহী মহানগরীকে শিক্ষা ক্ষেত্রে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নগরীর শিক্ষার মানোয়ন্ননে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে।
এজন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেবলমাত্র রাজধানীতেই মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করলে হবে না। রাজশাহী মহানগরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহনের পাশাপাশি তা বাসত্মবায়নের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
এসময় অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, নিজ সনত্মানদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করতে হবে। যাতে করে তারা নিজেদেরকে কোন ধরনের সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িয়ে না ফেলে। তবেই তারা নিজেদের দুরদর্শীতার মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ অপ্রতুল। কিন্তু সদিচ্ছা রয়েছে। এই সদিচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে রাজশাহী মহানগরীকে সুন্দর, পরিছন্ন ও শান্তিময় নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য সর্বসত্মরের নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সকলের সহযোগিতায় রাজশাহীকে আরো শানিত্মময়, সবুজ ও শিক্ষায় সমৃদ্ধকরণের প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমরা একটি সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সে স্বপ্নকে আমরা বাসত্মবে রূপ দিতে চাই। এজন্য বর্তমান পরিষদ ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাসত্মবায়ন শুরু করেছে। মহানগরীর পরিবেশ আরো সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মতকরণের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু হয়েছে।
মেয়র তাঁর ভিশনের গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা উলেস্নখ করে বলেন, শিক্ষানগরীকে আরো বিকশিতকরণের লক্ষ্যে আমরা আইটি পলস্নী স্থাপন, আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ক্যাম্পাস স্থাপন, উন্নতমানের উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের পাশাপাশি মহানগরীকে মাদকমুক্ত করতে চাই। মাদকমুক্তকরণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশিস্নষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুব সমপ্রদায় যেন মাদকে আসক্তে না হয়ে যায়, সেজন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ৫০/৬০টি খেলার মাঠ সংস্কার করতে চাই। তারা যেন খেলার সাথে সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পায়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশের কাজে এগিয়ে আসার জন্য উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে বলেন, আগামীতে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে।
সবাই এএইচএসসি পরীক্ষায়ও মেয়র পদক পাবে। আগামীতে বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিয়ে বাংলাদেশ ও রাজশাহীর উন্নয়নে অবদান রাখবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মেয়র সবাইকে নিজ বাড়ির টব বা সুবিধা মতো স্থানে একটি করে গাছ লাগানোর অনুরোধ জানান।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর এম রফিকুল ইসলাম এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী’র সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর শিরীন সুফিয়া খানম।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বেলাল আহম্মেদ, কৃতী শিক্ষার্থী শিরোইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ সানোয়ার জামান, রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ তামান্না তাসনিম উপমা, রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল থেকে উত্তীর্ণ আশরাফুল ইসলাম ও পিএন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ সেজুতি সাবরিন বক্তব্য পেশ করেন। স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সচিব একেএম মাসুদুজ্জামান।
এস.এইচ.এম তরিকুল ইসলাম/