আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত জামালপুর সদরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের বিশাল চরবাসী। বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠামোর অভাবের পাশাপাশি চরের অনেক গ্রামে এখনও বৈদ্যুতিক লাইন সমপ্রসারণ হয়নি। বিদ্যুতের আলোর সুবিধা না পেলেও চরবাসীর অনেকের ঘরে আজ ইলেকিট্রক বাল্ব জ্বলে, সাদাকালো বা রঙিন টিভি চলে, বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরে। ছেলে মেয়েরা সানন্দে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে। এ সবই সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র সৌর বিদ্যুতের কারণে।
জামালপুর জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নদ বিচ্ছিন্ন ৩নং লক্ষ্মীরচর ও তুলশীরচর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের হাতে গুনা কয়েকটি গ্রামে শেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির সঞ্চালন লাইন রয়েছে। কিন’ বেশির ভাগ গ্রাম এখনও বিদ্যুতহীন। এই ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার বাসিন্দা হাশেম আলী, আবুল কাশেম, লাল মিয়া, ফরহাদ আলী, আব্দুল আজিজ, হযরত আলী, মজিবর রহমান, সুমন মিয়া জানান, আমাদের গজারিয়া গ্রাম থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে অন্য গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের লাইন রয়েছে। কিন’ আমাদের এই গ্রামের মানুষ পল্লী বিদ্যুতের কোন সুবিধা পাচ্ছে না।
সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্রের ধুসর বালুময় বিশাল চর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোটামুটি স্বচ্ছল প্রতিটি পরিবারের কর্তাব্যক্তি টাকা খরচ করে বাড়ীর টিনের চালের উপর সৌর বিদ্যুতের সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন। কলেজ ছাত্র সুমন জানান, আমাদের গ্রামের আড়াই থেকে তিনশ’ পরিবার আজ সৌর বিদ্যুতের সোলার প্যানেল বসিয়েছেন। তিনি জানান, চর এলাকার বিদ্যুতহীন প্রায় প্রতিটি গ্রামেই কম বেশি সোলার প্যানেল রয়েছে। একেকটি সোলার প্যানেল বাবদ খরচ হয় ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। এত মোটা টাকা দিয়ে ইচ্ছে থাকার পরও অনেকের সোলার প্যানেল স’াপন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে যারা মোটা টাকা খরচ করে বসিয়েছেন তারা সুবিধা পাচ্ছেন।
সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে গ্রামবাসী বর্তমানে সন্ধ্যায় বৈদ্যুতিক আলোর সাহায্যে সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম সমাধান ছাড়াও লেখাপড়া, টিভি দেখা, গরমে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। চরের বিভিন্ন হাট-বাজারে সন্ধ্যায় বেচাকেনা চলছে সৌর বিদ্যুতের আলোয়। বিনোদনের খোরাক মেটাতে অনেকেই দিনের বেলায় সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে টিভি খোলে বসেন।
চরের কৃষকরা জানান, উপরের বালু মাটি স্তর থেকে মাত্র ২০ ফুট গভিরেই রয়েছে টলটলে পানি। বৈদ্যুতি মটর না থাকায় এই চরের কৃষকরা আজও ঢেঁকিকল, কোয়ায় দড়ি বেধে বালতিতে কিংবা শ্যালো ইঞ্জিনের সাহায্যে ধান ক্ষেতসহ সবজি ক্ষেতে সেচ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
চরবাসী আরও জানান, চরের মানুষ পল্লী বিদ্যুতের সুবিধা পেলে ফসলসহ সর্ব ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাবে। বেড়ে যাবে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গতি।
ছাইদুর রহমান, জামালপুর