জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সব দেশের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত তৃতীয় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) উদ্বোধনী অধিবেশনে দেয়া বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বান কি মুন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এতে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, গত মাসে ৭০০ কোটি জনসংখ্যা অতিক্রম করা এ বিশ্বকে নিরাপদ ও উন্নত হিসেবে গড়তে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।
বান কি মুন আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কোনো দেশই হুমকির বাইরে নয়।
এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোকে দেয়া উন্নয়ন সহায়তা ও জলবায়ু সহায়তাকে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন প্রথমবারের মতো সিভিএফ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছান । দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার তিন দেশ সফর কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিনি প্রথম সফরে আসেন বাংলাদেশে। তার স্ত্রী বান সুন টায়েকও তার সঙ্গে রয়েছেন।
গতকাল রোববার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সম্মেলনের টেকনিক্যাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নেইল ওয়াকার, বন ও পরিবেশ সচিব মেজবাহ-উল-আলম। সম্মেলনে ২৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১১টি দেশের মন্ত্রী পর্যায়ে প্রতিনিধি রয়েছেন। সভায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
নেইল ওয়াকার বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে পরিবহনে সিএনজি গ্যাসের ব্যবহার ও উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন বেশ সফলতা পেয়েছে। জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জনগণকে সম্পৃক্ত করে জলবায়ু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে জাতিসংঘের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশে অবস্থানকালে মৌলভীবাজারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ঢাকায় আন্তর্জাতিক উদারাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) পরিদর্শন করবেন।
বান কি মুন ঢাকায়: তিন দিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহ জালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণে রোববার থেকে ঢাকায় শুরু হওয়া ‘ক্লাইমেট ভলনারেবল ফোরামের’ আর্ন্তজাতিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে বান কি মুন ঢাকা এলেন। আগামীকাল সোমবার সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশে সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও সফরে বান কি মুন মৌলভীবাজারের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করবেন। সরকার ও ব্রাকের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি প্রকল্পও পরিদর্শন করবেন তিনি।
এছাড়া সফরে আইসিডিডিআরবি পরিদর্শন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেইনিং (বিআইপিএসওটি) পরিদর্শন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
দায়িত্ব পালনের সময় যেসব শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের সাথে তার দেখা করার কথা রয়েছে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেবেন বান কি মুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে দেখা করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।
নারী ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সাথেও বৈঠক করবেন তিনি।
ইউনিসেফের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সফরের পর থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া সফর করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
এদিকে, শুরু হওয়া জলবায়ু সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সম্মিলিতভাবে ঢাকা ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। এই ঢাকা ঘোষণাকে ডারবানের আর্ন্তজাতিক জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।
‘ক্লাইমেট ভলনারেবল ফোরাম’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের আয়োজনে দুদিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বের ৬০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে গঠন করা হয় ক্লাইমেট ভলনারেবল ফোরাম। ফোরমের প্রথম বৈঠকটি হয় মালদ্বীপে। বাংলাদেশে সম্মেলন এই সংগঠনের তৃতীয় বৈঠক। নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ দক্ষিণ আফিকারর ডরবানে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে এই সম্মলনের আয়োজন করা হয়েছে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ঢাকা