লিখেছেন : মহরম আলী
সব সমাপ্তির স্বাদ একরকম নয়। জীবন সমাপ্তির বেদনা যেমন আমাদের কাঁদায় তেমনি কোন সুন্দর উদ্যোগের সুন্দর সমাপ্তি আমাদের আনন্দ দেয় এবং পাশাপাশি নতুন উদ্যোগ গ্রহনে উৎসাহ যোগায়। তবে আমরা আরো অনেক বেশি আনন্দিত হই যখন কোন উদ্যোগের সমাপ্তিতে থাকে কোন সুন্দর অর্জন। আজ আমি আপনাদের একটি সুন্দর উদ্যোগের সুন্দর অর্জনের গল্প শোনাবো। তার নাম মোঃ মহরম আলী। ২৫ বছর বয়সী এক প্রতিন্ধী যুবক। যিনি হু্ইল চেয়ারে চলাফেরা করেন। এই মুহুর্তে তিনি রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক-এ। তিনি তার হুইলচেয়ার ব্যবহার করে বাস/ট্রেন/জাহাজের মাধ্যমে ২৫,৮২৮ কিলোমিটার, ১৯টি দেশ (বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল, তিব্বত, চীন, কাজাখস্তান, রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, লিয়েখটেনস্টেইন, অষ্ট্রিয়া, ইতালি, ভেটিকান সিটি, চেক রিপাবলিক, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড এবং ইউএসএ), ৩টি মহাদেশ (এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা) পারি দিয়ে তিনি গত ৯ই জানুয়ারী নিউ ইয়র্ক-এর জ্যামাইকা-তে পৌছেছেন। থাকছেন মেহেরপুরের নিউ ইয়র্ক প্রবাশী মি. জাকির হোসেন-এর বাসায়।
অর্জন: গত ১৩ই জানুয়ারী তিনি নিউ ইয়র্কে অবস্থিত জাতি সংঘের সদর দপ্তরে এবং জাতি সংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে তার ”ওয়ার্ড ডিজএ্যাবিলিটি ফান্ড” কনসেপ্টটি অফিসিয়ালি উপস্থাপন করেন এবং জমা দেন। এখন জাতি সংঘ এটি নিয়ে কাজ করবেন। আগামী সেপ্টেম্বরে মহরমকে আবারো নিই ইয়র্কে যেতে হবে ১৫ জাতি বিশিষ্ঠ জাতি সংঘের প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক কমিটির সামনে তার ”ওয়ার্ড ডিজএ্যাবিলিটি ফান্ড” কনসেপ্ট-এর উপর প্রফেশনাল ব্যখ্যা এবং এর প্রয়োজনীতা উপস্থান করার জন্য। তিনি বলেন এটি একটি সদুর প্রসারী এবং দীর্ঘ মেয়াদি কাজ। একাজকে এগিয়ে নিতে বেশ সময়, পরিশ্রম এবং অর্থের দরকার হবে।
মূল গল্পে আসি: তার জন্ম, বেড়ে উঠা, শিক্ষা সবই হয়েছে নাটোর জেলার সদর উপজেলার দক্ষিনপুর গ্রামে। বর্তমানে কাজ করছেন মিস ভেলরী টেইলর প্রতিষ্ঠান সিআরপি-র ফিজিওথেরাপি বিভাগে। পাশাপাশি জরিত আছেন জাগরণ, এডিডি বাংলাদেশ, এনজিডিও, নন্দন-নাটোর, ভোলাস চিলড্রেন এম এ আলী প্রতিবন্ধী স্কুল, প্রথম আলো বন্ধূসভা, আদ্রিদ-বরিশাল এর সাথে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মহরম একটি সুন্দর সপ্নের (কনসেপ্ট) জন্ম দেন। সপ্নটি হচ্ছে: সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য একটি কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক সরকার উদ্যোগ তহবিল ধারনা (কনসেপ্ট)। তার ভাষ্য মতে বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য জাতি সংঘ সহ সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে অনেক ধরনের তহবিল রয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর সব রাষ্ট্র সরকার মিলে (অল ষ্ট্যাট ইনিশিয়েটিভ) কোন কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক তহবিল নেই। তিনি মনে করেন: প্রতিবন্ধীতা একটি উন্নয়নমূলক ইস্যু। যেটি অন্যান্য সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মতই। এটাকে সামান্য-গুরুত্বপূর্ন ভাবার কোন সুযোগ নেই। তাই প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সারা দুনিয়া জুরে লক্ষ লক্ষ সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাদের মধ্যে বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম-ই চোখে পড়ার মত। আবার এই উন্নয় ইস্যুটিকে চলমান রাখার জন্য কাজ করছে জাতি সংঘ সহ অনেক সরকারি/বেসরকারি সংস্থা। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করছে এমন প্রত্যেকটি সংস্থার অর্থ প্রাপ্তি একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। এসকল সংস্থা প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে ব্যর্থ হলে এই অতি গুরুত্বপূর্ন উন্নয়ন ইস্যুটি ধীরগতি পাবে বা অনেক ক্ষেত্রে থেমেও যেতে পারে। ধীরগতি পাওয়া বা থেমে যাওয়া কোনটিই মহরম প্রত্যাশা করেন না। তাই তিনি মনে করেন সারা বিশ্বের প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য একটি কেন্দ্রিয় আন্তর্জাতিক সরকার উদ্যোগ তহবিল থাকা খুবই দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। তিনি নিজের মেধা খাটিয়ে এই তহবিলের জন্য একটি কনসেপ্ট পেপার (ইনফরমাল এ্যান্ড নন-প্রফেশনাল) তেরী করলেন। নাম দিলেন ওয়ার্লড ডিসএ্যাবিলিট ফান্ড কনসেপ্ট। প্রথমে তিনি তা শেয়ার করলেন তার বন্ধুদের এবং সহকর্মীদের সাথে। অনেকেই বুঝতেই চাইলেন না আসলে মহরম কি বলছেন তবে অনেকেই এই ধারনাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলো। তাদের অন্যতম জোতিস্ক বিশ্বাস জিকো। মি. জিকো জাগরন নামক একটি এনজিও-র কার্য নির্বাহী সদস্য এবং সিআরপি-প্রথমআলো বন্ধূসভার উপদেষ্টা। অনেকে বললেন এটি অনেক অনেক বড় বিষয়। মহরম ভাবতে শুরু করলেন কিভাবে তার এই ধারনাটি বিশ্ব দরবারে পোছানো যাই। মহরম রাজনীতি বিশ্বাস করেন এবং তিনি খুব ভালোভাবে বুঝেন যে এই মহাবিশ্বের উন্নয়নে রাজনীতিকরাই একমাত্র ভরসা। তাই তিনি মনস্থ করলেন তার এই তহবিল ধারনা তিনি রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিনত করবেন। কারন: কোন-না-কোনভাবে আমরা রাজনীতিকদের উপর নির্ভলশীল এবং তারাই বিশ্বের কল-কাঠি নারছেন। পৃথিবীর প্রায় ৯০% দেশেই রয়েছে রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার। সরকার নামক ম্যাকানিজম-ই চালাচ্ছেন ওই দেশগুলো। এমনই ১৯৩টি দেশ নিয়ে গঠিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংগঠন হচ্ছে জাতি সংঘ। সুতরাং তিনি ভাবলেন জাতি সংঘ হচ্ছে এই ধরনের বড় বড় উদ্যোগ ধারনা উপস্থাপনের জন্য পারফেক্ট সংগঠন।
তিনি নিজেকে মুল্যায়ন করলেন এভাবে – “যেহেতু আমি তৃতীয় বিশ্বের একটি গরীব দেশের অতি সাধারন নাগরিক তাই আমার এই তহবিল ধারনাটি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে আমাকে একটি সম্পূর্ন বিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ভিন্ন পন্থা খুজতে খুজতে তিনি ভাবলেন কেমন হয় যদি তিনি হুইলচেয়ার ব্যবহার করে বাস/ট্রেন/জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ইউএসএ-এর বানিজ্যিক রাজধানী নিউ ইয়ক পৌছান? যেখানে অবস্থিত জাতি সংঘের সদর দপ্তর। হ্যা অবশ্যই হুইলচেয়ারে বিশ্ব ভ্রমন একটি ভিন্ন ধারনা এবং এই সম্পূর্ন ভিন্নধর্মী ভ্রমনের মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করে তার তহবিল ধারনা উপস্থাপনের জন্য তিনি মনস্থ করেন। তিনি বলেন, ”আমি প্রথমেই যে বিষয়গুলো ভেবে ভয় পেয়েছিলাম পড়ে অবশ্য সত্যি সতিই সেই বিষয়গুলো ভয়ের কারন হয়ে দারিয়েছিলো”। তার হুইলচেয়ারে বিশ্ব ভ্রমনের মূল কঠিন বিষয়গুলো ছিলো সকল দেশের ভিসা সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা। বাংলাদেশের সংবাদ পত্র এবং ইউকেএআইডি’র সহযোগিতায় তিনি সকল ভিসা সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। কিন্তু তিনি অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে হোচট খান। অর্থ সংগ্রহে ছুটা-ছুটির তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার না করে তিনি শুধু বলেন ”আমি বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের পুরোটা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছি এবং প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব গত প্রায় ৭ মাসে আমাকে অকে কর্মকান্ড থেকে বিরত রেখেছে, যা এখনো আমার পিছু ছাড়েনি”। তবে তিনি খুব জোরালে কন্ঠে বলেছে বাংলাদেশের ৪টি এনজিও (জাগরন, সিআরপি, এডিডি, এনজিডিও) সহ রাশিয়া এবং ইউরোপের কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাকে সহযোগিতা করেছেন। তাছাড়া কোনভাবেই এই ভিন্নধর্মী ভ্রমন শুরু করে নিউ ইয়ক পৌছাতে পারতেন না।
গত ২৫ জুন ২০১১-তে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার হতে যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে বাসে করে তিনি যান ইন্ডিয়ার রাজধানী দিল্লিতে। সেখানে তিনি থাকেন ৩৪ দিন। মিডিয়ার সাথে কাজ সহ তিনি সেখান থেকে সংগ্রহ করেন আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড এ্যামবেসি হতে সেনজেন এবং কাজাখস্তান ভিসা। তারপর তিনি যান নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। সেখানে তিনি থাকেন ৬ দিন। প্রয়োজনীয় অনুমতে সংগ্রহের পর তিনি যান কাজাখস্তান। তারপর ৭৭ ঘন্টা ট্রেনে করে তিনি পৌছান রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে। মস্কোতে তিনি থাকেন ১৯ দিন। যেহেতু তার প্রধান স্পনসর মস্কো ভিত্তিক তাই সেখানে তিনি বিভিন্ন মিডিয়া, সংগঠনের সাথে কথা বলতে সমর্থ হন। মিটিং করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মস্কো, বাংলাদেশ প্রবাশি পরিষদ, এসোসিয়েশন অফ ইউরোপিয়ান বিজনেস এবং আরো কিছু সংগঠনের সাথে। তারপর তিনি ইউক্রেনিয়ান ট্রেনে কওে যান ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ। মিটিং করেন বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইট ইউক্রেন, ইউক্রেন কনসালটিং সাথে। বাংলাদেশি ছাত্রদের আমন্ত্রনে তিনি ভ্রমন করেন অন্য দুই বড় শহর লুগান্সক্ এবং সিমফ্রাপোলে। ১৫ দিন ইউক্রেনে কাটিয়ে তিনি ১লা অক্টোবর ইউক্রেনিয়ান ট্রেনের কওে পোল্যান্ডে ঢোকার মাধ্যমে এশিয়ার পাট চুকিয়ে ইউরোপ ভ্রমন শুরু করেন। ১ দিন পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসো-তে কাটিয়ে ওয়ারসো-বার্লিন এক্সপ্রেস ট্রেনে মহরম জার্মানির রাজধানী বার্লিনে যান। সেখানে তিনি দেখা করেন তার জার্মান বন্ধু ডেভিড লেবুজারের সাথে এবং অন্য একজন স্পনসর-এর সাথে। তারপর তিনি জার্মান ট্রেনে করে যান জার্মানির অন্য সহর ফুলদাতে। সেখানে তিনি থাকেন ৩ দিন এবং দেখানে করেন অন্য আরো একজন স্পনসর-এর সাথে। কথা বলেন একনজ ক্ষুদ্র সফট্ওয়ার ব্যবসায়ীর সংগে যিনি বাংলাদেশী ক্ষুদ্র প্রোগ্রামারদের কাজে লাগাতে চান এবং ইতোমধ্যে ভারতের ক্ষুদ্র সফট্ওয়ার নির্মাতাদের সাথে কাজ করছেন। কথা বলেন বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের দ্বারা ইন্টারনেট ভিত্তিক রেডিও-এর সম্ভাব্যতা নিয়ে এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে। তারপর আবারো জার্মান ট্রেনে কও ৯েই অক্টোবর তিনি যান জার্মানির অন্য শহর কনষ্টাঞ্জ-এ। দেখা করেন তার ট্রাভেল এ্যাডভাইজারের সাথে। ওই দিন দুপুরেই তার এক জার্মান শুভাকাংখীর (যিনি সুইজারল্যান্ডে থাকেন) বাসায় দুপুরের খাবার খেতে সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালান শহরে যান তার ব্যক্তিগত গাড়ীতে করে। দুপুরের খাবারের পর তিনি বিকালে ঐ শুভাকাংখীর সাথে যান পাশের ছোট্ট দেশ লিয়েখটেনস্টেইন-এ। লিয়েখটেনস্টেইন ৩৫ হাজার মানুষের একটি ছোট্ট দেশ। লিয়েখটেনস্টেইন-এ ৪০ মিনিট কাটানোর পর রেড বুল এনার্জি ড্রিংক কম্পানির আমন্ত্রনে অষ্ট্রিয়ান ট্রেনে করে তিনি পৌছান অষ্ট্রিয়ার বানিজ্যিক রাজধানী সলজ্বার্গে। ৯ই অক্টোবর ২০১১ দিনটি ছিলো তার জন্য একটি রেকর্ড দিন। এক দিনে তিনি পদার্পন করেন ৪ দেশ – জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, লিয়েখটেনস্টেইন এবং অষ্ট্রিয়া। পৃথিবীর খ্যাতনামা এনার্জি ড্রিংক কম্পানির আমন্ত্রন পেয়ে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবানদের একজন মনে করেন। কারন রেড বুলের অফিসিয়াল অথিতি হওয়া ছোট বিষয় নয়। সেখানে তিনি কথা বলে অষ্ট্রিয়ান ন্যাশনাল হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দল, রেডবুল কম্পানির অথরিটির এবং রেড বুলের অংগ-প্রতিষ্ঠান হাঙ্গার ৭ (হাঙ্গার সেভেন) সাথে। তারপর তিনি ইটালিয়ান ট্রেনে করে ভ্রমন করেন ইটালি’র শহর রোম এবং মিলান। সেখানে তিনি দেখতে পান ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশিরা ইটালিতে এসে কত মানবেতর জীবন-যাপন করেন। দেখেন বিদেশের মাটিতে এসেও দেশের রাজনীতি নিয়ে কিভাবে দলা-দলি করে নিজেদের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি করেন। এরই মধ্যে ২১ অক্টোবর জার্মাানির প্রভাশালী প্রতিকা স্পিগেল এই ভ্রমন এবং ভ্রমনের উদ্দ্যেশের উপর একটি বড় প্রতিবেদন করে। প্রকাশ করে ৬টি ছবি। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জার্মান ভাষীদের নিকট থেকে পেতে থাকেন ছোট/বড় অনেক আমন্ত্রন। দাওয়াত আসে আবারো জার্মানী এবং সুইজারল্যান্ড ভ্রমনের। ইটালির রোম হতে ইটালিয়ান ট্রেনে করে আবারো যান সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায়। সেভানে ৪দিন থাকার পর ৬ নভেম্বর জার্মানীর ছোট্ট শহর হফ-এ যান। সেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বড় স্কুলের আমন্ত্রনে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকাররি অনুষ্ঠানে মুল বক্তা হিসাবে ভ্রমন অভিজ্ঞতা এবং ওয়ার্ল্ড ডিজ্যাবিলিটি ফান্ড-এর উপর কথা বলেন। ৩য় দিন বিকালে ঐ স্কুলেরই এক চেক রিপাবলিকান নারী শিক্ষকের সাথে রাতের খাবার খেতে চেক রিপাবলিক যান। তার সাথে ঐ রাতেই আবার জার্মানী ফিরে আসেন। ৩৩৮ ইউরো দিয়ে টিকিট কিনে জার্মান ট্রেন দিয়ে ১০ নভেম্বর শুরু হয়ে ১১ নভেম্বর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস্ হয়ে ইউরো ষ্টার ট্রেনে করে একই দিন দুপুরে মহরম পৃথিবীর ঐতিহ্যবাহী শহর ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন পৌছান। মহরমকে লন্ডনে রিসিভ করেন তার সাবেক সহকর্মী পাপ্পু লাল মদক এবং তার সহপাঠিরা। লন্ডন সহ ইংল্যান্ডের আরো কিছু শহরের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের দেখা করেন এবং কথা বলেন। ভিজিট করেন কিছু আকর্ষনীয় জায়গা। অভ্যাস গড়ে তুলেন জন পরিবহনে এবং আন্ডার গ্রাউন্ড ট্রেনে চলা-ফেরার। লন্ডনে তিনি ছিলেন পূর্ব লন্ডনের নিউ হাম এলাকাতে। পেয়েছেন বাংলাদেশি ছাত্রদের সম্মান। হতার ভাষ্যমতে ” আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না পাপ্পুদা, আতিক ভাই, পিয়াস ভাই, রনিভাই সহ আরো অনেকের কথা। আমার মত হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য প্রবেশগম্য কম টাকায় বাসা পাওয়া লন্ডনে খুবই কঠিন। উপরোক্ত ব্যাক্তিগন আমাকে সর্বক্ষেত্রে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। একজন পেয়িং গেষ্ট হিসাবে প্রায় ৫৮ দিন আমি ইউকে-তে কাটিয়েছি”। সর্বমোট ২৫,৮২৮ কিলোমিটার, ১৯টি দেশ, ৩টি মহাদেশ পারি দিয়ে গত ৯ জানুয়ারী তিনি নিউ ইয়র্কে পৌছান।
তিনি বলেন এটি একটি সদুর প্রসারী এবং দীর্ঘ মেয়াদি কাজ। একাজকে এগিয়ে নিতে বেশ সময়, পরিশ্রম এবং অর্থের দরকার হবে। সবশেষ তিনি বলেন ”এটি ছিলো আমার উদ্যোগ কিন্তু এটি সবার অর্জন। আমার এই অর্জনে পাশে থাকার জন্য সকল স্পনসর, সহকর্মী, শুভাকাংখী, দেশ/বিদেশের সকল মিডিয়া, সকল এ্যামবেসি, সকল ডিপলোমেটিক মিশন, দেশবাসিসহ সবাইকে ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা”। ফেব্রয়ারী মাসের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় অবতরন করবেন।