ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  তিস্তা পাড়ের নারী মোহসনা বেগম। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর খুব কষ্টে চারটি গবাদি পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে বসতবাড়িতে হাঁটু পানি ওঠায় পরিবার ও গবাদি পশুকে নিয়ে এখন রাস্তায় নেমেছেন। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে তারা রাত কাটাচ্ছেন সেখানে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা মোহসনা বেগম। বর্তমানে তিনি গঙ্গাচাড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইচলির চরের রাস্তায় থাকছেন। তার স্বামী নাম মাহফুজার রহমান।

মোহসনা বেগমের মতো আরেক বৃদ্ধা নারী ছমুরোন নেছা। এ নিয়ে তার বাড়িতে পানি উঠেছে ১৩ বারের মতো। এক সময় ওই নারীর চরাঞ্চলে প্রচুর জমিজামা ছিল। কিন্তু নদীর ভাঙনে আজ পথের ভিখারি তিনি।

 

তিনি বলেন, ১৩/১৪ বার বাড়ি সরিয়েছি। বার বার তিস্তা পাড়ে বাড়ি করে থাকি। আশা করি একদিন হয়ত তিস্তা পাড়ের মানুষের কোনো কষ্ট থাকবে না। কিন্তু এত দিনে আজও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরে জনসভায় ভাষণে আশ্বাস দেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। সেটির কোনো লক্ষণ দেখছি না। আমি চাই দ্রুত বাস্তবায়ন করে তিস্তা পাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবে।

স্থানীয় জানান, গত কয়দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীসহ ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে এখনো পানি তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। আর ব্যারাজ পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার নিচে। ফলে তিস্তার পাড়ের মানুষের এখনো দুর্ভোগ কমেনি।

এদিকে পানি বৃদ্ধি থাকায় তিস্তার চরাঞ্চল ও বামতীরের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বন্যার পানিতে তালিয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির বাদাম, সবজিখেত। পানির স্রোতে ভেসে গেছে মৎস্যচাষিদের স্বপ্ন। কয়েক শত পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যচাষিরা।

স্থানীয়রা আরও জানান, গত শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ হঠাৎ বাড়তে থাকে। পরদিন সকালে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তার পানি প্রবাহ। ফলে তিস্তার চরাঞ্চল ও বাম তীরের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। শনিবার সকাল থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকেলে পুনরায় কমতে শুরু করে।

 

তিস্তার পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় বন্যা পরিস্থিতিরও অনেকটা উন্নতি ঘটেছে। কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। এ বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। তারাও মুক্ত হতে শুরু করেছেন। বন্যার পানিতে তালিয়ে গেছে শত শত হেক্টর জমির সবজিখেত। পানির স্রোতে ভেসে গেছে মৎস্যচাষিদের স্বপ্ন। কয়েক শত পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৎস্যচাষিরা।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। তিস্তার বাম তীরের সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড়, চন্ডিমারী, বালাপাড়া এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা জানিয়েছেন, কয়েকদিন বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। তাই তিস্তার পারি উঠানামা করবে। আশা করা হচ্ছে কয়েকদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here