বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলে অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকের ব্যাপকতা। র্যাব-৮ ২০১১ সালে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করেছে। সুন্দরবন সহ উপকূলীয় এলাকায় র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে ১৮ জলদস্যু নিহত হয়েছে। আটক হয়েছে ৩ সহশ্রাধিক অপরাধী।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার সাথে মাদারিপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলা নিয়ে গঠিত র্যাব-৮। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছর র্যাব এ ১১ জেলা থেকে ১৩৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে দেশী পিস্তল ২টি, বিদেশী পিসত্মল ১৭টি, দেশী রিভলবার ১টি, বিদেশী রিভলবার ৬টি, পাইপ গান ৯টি, বিদেশী এসবিবিএল ১৩টি, ডিবিবিএল ১টি, এয়ারগান ৪টি, ওয়ান শুটারগান ২৭টি, সাটারগান ১টি, ১ নলা বন্দুক ৪টি, এলজি ৩৯টি, বন্দুক ১০টি ও কাটা রাইফেল ১০টি। এছাড়া ১২৯টি বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি ৩টি বোমা, ১৫টি ককটেল, বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের ১০টি ম্যাগাজিন, ৮২২ রাউন্ড তাজা গুলি ও ৭৮টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
আগ্নেয়াস্ত্রের মত মাদক দ্রব্যের ব্যবহারও বেড়েছে আশংকাজনক হারে। সর্বত্রই এখন মাদকের ছড়াছড়ি। গত ১ বছরের প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক হয়েছে মাদক ব্যবসায়ী। উদ্ধার হয়েছে গাজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। উদ্ধারকৃত মাদক দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ১৪ হাজার ৬২৫ বোতল ফেন্সিডিল, ১১ মন ২৮ কেজি গাজা, ৬৩ কেজি ভাং, ৮৩ বোতল বিদেশী মদ, ১০৫৭ বোতল দেশী মদ, ২৪৭ ক্যান বিদেশী বিয়ার, ৩০ লিটার স্প্রীট, ৩ হাজার ৩৫৯ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৬৫টি নেশা জাতীয় ইনজেকশন। আটককৃত মাদকের তুলনায় আমদানীকৃত মাদকের পরিমান বহু গুন বেশি বলে ধারনা বিভিন্ন মহলের।
অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১ বছরে র্যাবের হাতে আটক হয়েছে ৩ হাজার ৬২১ জন আসামী। এর মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৯০ জন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী ১৮, ওয়ারেন্ট ভুক্ত ৭৩১, তালিকা ভুক্ত সন্ত্রাসী ২, এজাহার ভুক্ত আসামী ২৮, জেএমবি সদস্য ১, হিযবুত তাওহিদের সদস্য ৮, চরমপন্থি ১, ৩৪ ধারায় ১, ৫৪ ধারায় ১০৬, ৫৫ ধারায় ১ এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
অপরাধ দমনে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহ ৭৫২টি ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় গত ১ বছরে। এসব আদালত থেকে বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা আদায় করা হয় ৭৬ লাখ ২ হাজার ১৬৪ টাকা। আটককৃত অন্যান্য দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে জাটকা ইলিশ ৪ হাজার ৩৯ কেজি, কারেন্ট জাল ৬ লাখ ৭২ হাজার ২শ মিটার, পলিথিন ৪ হাজার ৭৩৫ কেজি, অবৈধ কোমল পানীয় ৩২ হাজার ১৮৮ পিস, ৪০ কেজি কার্বাইড যুক্ত আম এবং ৬ হাজার ৯৪টি পাইরেটেড সিডি।
র্যাব-৮ এর অন্যান্য অভিযান থেকে উদ্ধার হয় নগদ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬০ টাকা, ২ লাখ ৪১ হাজার ২শ জাল টাকা, ২০ হাজার ভারতীয় রম্নপি, ১ হাজার লিটার ভেজাল মবিল, ২১৫টি মোবাইল সেট, ১৭২টি মোবাইল সিম, এ্যালুমিনিয়ামের পাউডার ৪শ গ্রাম, ২টি বাইনোকুলার, ১২টি বান্ডুলিয়ার, ৩২টি দাজ্জাল সিডি, ৩২টি দাজ্জাল বই, ২৯০ জিহাদী লিফলেট, ৫৪টি জিহাদী পোস্টার, ১টি জিহাদী ক্যালেন্ডার, ১৪টি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, ৪৫টি সিপিইউ, ২৪টি কার্ড রিডার, ৪টি প্যান ড্রাইভ, ১৪টি ক্যামেরা, ১টি হরিনের চামড়া, ২৭০ টি ডিভিডি পেস্নয়ার, ১টি হ্যান্ডকাফ, ৩টি ল্যাপটপ, ২টি সেনাবাহিনীর ভূয়া পরিচয়পত্র, র্যাবের গেঞ্জি ১টি, ২ হাজার ২২৪টি সরকারী বই, ৪৭টি ভারতীয় শাড়ী, জাল রেজিষ্ট্রেশন ফরম ৭টি, জাল পাসপোর্ট ৩৫৩টি, জাল পাসপোর্ট ফরম ৩৪৪টি, ওয়াকি টকি সেট ৫টি, ৫১৪ ভরি ১১ আনা স্বর্ন, ৭টি বিভিন্ন ধরনের মূর্তি, ১ হাজার ৮৪৯টি (মাইক্রো, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মটর সাইকেল ও বাস) যানবাহন এবং বিভিন্ন ইটের ভাটা থেকে ২৬ হাজার ৩২২ মন জ্বালানী কাঠ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন মামলার ৫৪ জন ভিকটিম এবং ইটের ভাটায় আটকে রাখা ৫৮ জন জিম্মি শ্রমিককে উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাব-৮ এর কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই র্যাব-৮ তাদের আওতাধীন সকল এলাকার অপরাধ মূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, সন্ত্রাসী, জলদস্যু, ডাকাত সহ অন্যান্য অপরাধী আটকের পাশাপাশি সমাজ জুড়ে মাদকের ব্যাপকতা প্রতিরোধে র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মামুনুর রশিদ/বরিশাল