বরিশালে বিবাহনিবন্ধকদের বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সোহানুর রহমান :: বিবাহনিবন্ধন আইন মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে একশ্রেণির আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতের দেয়া নোটারী পাবলিক (এফিডেভিট)। প্রেমের সম্পর্কের জেরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরীরা পরিবারকে উপেক্ষা করে এফিডেভিট করে তাদের বিয়ের বৈধতা দাবি করে। অনেক সময় এফিডেভিটের সূত্র ধরে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিবাহনিবন্ধনে নিবন্ধনকারীদের (কাজী-পুরোহিত-পাদ্র্রী) চাপ দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার বরিশালে অনুষ্ঠিত বিবাহনিবন্ধকদের বিভাগীয় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব ধর্মের বিবাহ নিবন্ধনকারীরা উন্মুক্ত মতামতে এ অভিযোগ করেন।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উন্নয়ন সংস্থা ইউনিসেফের সহযোগিতায় বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: মোশারফ হোসেন, ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক রাশিদা বেগম, জেলা রেজিস্টার শেখ মো. হাবিবুল্লাহ ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বিগরেডার।
বিভাগের ৬ জেলা থেকে চার শতাধিক বিবাহনিবন্ধনকারী ছাড়াও প্রতিটি জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
বিশেষ অতিথি আইন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব বুলবুল আহম্মেদ তার বক্তব্যে এফিডেভিট নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, এফিডেভিট বিবাহ কিংবা বিচ্ছেদের বৈধতা দিতে পারে না। মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা থাকার কারণেই অনেকে এফিডেভিটকেই এসবের বৈধ কাগজপত্র মনে করছেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী একাধিক কাজী অভিযোগ করেন, তারা বাল্যবিবাহ নিবন্ধনে রাজী না হলেও স্থানীয় মৌলভী কিংবা মুরব্বিরা গোপনে ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে পড়ান। অভিভাবকরা ওই বিয়ে আর নিবন্ধন করেন না। হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরোহিতরা বলেন, এ সম্প্রদায়ের জন্য প্রতিটি উপজেলায় একজন করে নিবন্ধনকারী। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে পুরোহিতরা বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলেও নিবন্ধনকারীদের অবহিত করেন না। নিন্মবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে বাল্যবিয়ে বেশি হচ্ছে বলে নিবন্ধনকারীরা অভিযোগ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস বলেন, সমাজের মানুষগুলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক একজন মেয়েকে যদি নিজের মেয়ে হিসাবে দেখেন, তাহলেই ওই মানুষটির মধ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বিবেক জাগ্রত হবে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here