ফুলশয্যার রাত প্রতিটি দম্পতির কাছেই সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলির একটি। এই ফুলশয্যার রাতকে কেন্দ্র করে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রীতি।

আমাদের দেশে ফুলশয্যার রাতে বরের দুধ খাওয়ার রীতি রয়েছে। ফুলশয্যার জন্য নির্দিষ্ট ঘরে রাখা থাকে কেশর ও পেস্তা কিংবা হলুদ মেশানো দুধের গ্লাস।
সাধারণত নববধূ নিজের হাতেই স্বামীকে খাইয়ে দেন সেই দুধ। কিন্তু এই রীতির ব্যাখ্যা কী? কেন সদ্য বিয়ে করা পুরুষটি দুধ খান ফুলশয্যার রাতে? কেন নববধূও খান না দুধ? আসুন, জেনে নেওয়া যাক।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফুলশয্যায় দুধ পানের রীতি অতি প্রাচীন। আসলে প্রাচীন যুগ থেকেই আমাদের কৃষি ও অর্থব্যবস্থায় এবং দৈনন্দিন জীবনে গোদুগ্ধের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সেই কারণে গোরুর দুধকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানেই তাই গরুর দুধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ করা যায়। ফুলশয্যার রাতে নববধূর হাতে তার স্বামীর দুধ পান তাদের বিবাহিত জীবনকে সুখ ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ করে তুলবে বলে বিশ্বাস করা হয়।

কিন্তু বিশেষভাবে ফুলশয্যার রাতেই কেন খাওয়া হয় দুধ? কেনই বা নববধূ সেই দুধ পান করেন না? সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের ব্যাখ্যা, ফুলশয্যার রাত হল স্বামী-স্ত্রীর প্রথম মিলনের রাত। সেই মিলনকে আরও আনন্দময় ও স্মরণীয় করে রাখতেই দুধ পান করেন বর। প্রাচীন আয়ুর্বেদ গ্রন্থ ‘অষ্টাঙ্গ সংগ্রহে’র ‘ক্ষীর বর্গ’ নামক অধ্যায়ে বলা হচ্ছে, দুধ হল ‘বৃশ্য’ বা কামোদ্দীপক, অর্থাৎ কামেচ্ছা ও কামশক্তি বৃ্দ্ধি করতে সহায়ক। এবং এই বৃশ্য কেবল পুরুষ শরীরেই কার্যকর হয়। কারণ দুধ পুরুষ শরীরের শুক্র ধাতুকে উজ্জীবিত করে। কিন্তু সাধারণভাবে শরীর শীতল হয় দুধের প্রভাবে। ফলে মিলনের মুহূর্তগুলি দীর্ঘস্থায়ী ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। এই আয়ুর্বেদিক পরামর্শ মেনেই প্রাচীন কাল থেকে ফুলশয্যায় বরের দুধ খাওয়ার রীতি চলে আসছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here