ঐতিহ্যবাহী মধুপুর গড়ের লাল মাটির বুকে শাল সেগুনের নৈঃস্বর্গিক লীলাভূমির প্রধান সড়কটি আজ সংস্কারের অভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপত্তার অভাবে ছিনতাই ও চুরি ডাকাতির ভয়ে মধুপুর ন্যাশনাল পার্কের প্রধান রসুলপুর-দোখলা সড়ক এখন ব্যবহারের সম্পুর্ণ অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে ভ্রমন পিপাষুরা এখন অরণখোলা ইউনিয়নের জলছত্র-শোলাকুড়ী সড়ক হয়ে পিকনিকস্পটগুলোতে যাতায়াত করছে।
ফকির সন্নাসী আন্দোলন, একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী বাংলার সমতলভূমির মধুপুর গড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য শীত মৌসুমে ভ্রমন পিপাষুরা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মধুপুর বনাঞ্চলে বেড়াতে আসেন। এখানকার আদিবাসী পলীর বৈচিত্র, কৃষ্টি কালচার, শাল গজারীর জরাজরি, প্রাণ বৈচিত্রের অপার মহিমা, বণ্য প্রাণীদের বিচরণ, মনোমুগ্ধকর বাইদ, দেশের আদর্শ রাবার বাগান, টেলকী বিমান বাহিনীর ফায়ারিং জোন, জলই কটেজ, চুনিয়া কটেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত দোখলা রেষ্ট হাউজ, পর্যটন টাওয়ার এবং মিশনারী এলাকাগুলো প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও রয়েছে ফরেষ্টের ছোট-বড় ৫টি কটেজ ও বাংলো, দুটি সুউচ্চ টাওয়ার এবং ৪টি বড় পিকনিক কর্ণার। লহুরিয়া বিটের গভীর জঙ্গলের মনোরম লেক, চিড়িয়াখানা, প্রাকৃতিক বনের বানর-হনুমান ও নানা জাতের পাখি বাড়তি আকর্ষণ। তবে এ পিকনিক স্পটে যাওয়ার রসুলপুর-দোখলা প্রধান সড়কের গভীর জঙ্গল পাড়ি দিয়ে চিড়িয়াখানা ও লেক দর্শনে যাওয়ার সময় প্রায় প্রায়ই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকে। একসময় শোলাকুড়ী, জামালপুরের কিছু অংশ ও অরণখোলা ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করত। সড়কটি বেহাল অবস্থার কারণে এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে যাতায়াত করতে এলাকাবাসীর নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দিনের বেলায় এ সড়ক দিয়ে মালামাল নিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। একাকী এ পথে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। জলছত্র-শোলাকুড়ী সড়কটি পাকা হওয়ার পর এসব এলাকার জনসাধারণ ধীরে ধীরে মধুপুরমূখী হয়ে পড়ে। অপরদিকে রসুলপুর-দোখলা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীরা বার বার ছিনতাই ও ডাকাতির স্বীকার হয়েছেন। সড়কটির ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চোরেরা ইট তুলে নিয়ে গেছে। ফলে এখনও এ সড়কটি বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটছে নানা অঘটন। ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের হাতে আক্রমনের স্বীকার হচ্ছে ভ্রমনপিপাষু ও এলাকাবাসীরা। সামপ্রতিক সময়ে ডলার ব্যবসায়ীরা বেছে নিয়েছেন এ নিরাপদ আশ্রয়টি। মাঝে মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফাঁদ পেতে লোকজন ডলার প্রতারণার জন্য এনে সর্বস্ব লুটে নেয়। ডাক চিৎকারেও কোন জনমানবের সারা মেলে না। দুস্কৃতিকারীদের এ অভয়ারণ্যে চলছে নানা অপরাধ। দেখেও যেন দেখার কেউ নেই। গায়রা গ্রামের আদিবাসী গারোরা জানায়, বনভোজনকারি ছাড়াও সাধারণ পথচারিরাও এ জঙ্গলাকীর্ন রাস্তায় দুস্কৃতকারীদের হাতে লুন্ঠনের শিকার হয়। এর মধ্যে পীরগাছা গ্রামের লেবেন মৃ, প্রণয় মৃ ও রঞ্জণ বর্ম্মন, গায়রা গ্রাম থেকে ফেরার পথে এখানে দুস্কৃতকারীদের কবলে পড়ে। দুর্বৃত্তরা তাদের বেদম পিটুনি দিয়ে নগদ ৫হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তৎকালিন মধুপুর বনাঞ্চলের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এখানে দুস্কৃতকারীদের কবলে পড়েন। তিনি দোখলা হতে গাড়ী নিয়ে রসুলপুর ফেরার পথে চিড়িয়াখানার অদূরে ২০-২৫ জন দুস্কৃতকারীর দ্বারা আক্রান্ত হন। বনরক্ষীরা গুলি করলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সিরাজগঞ্জ হতে পিকনিকে আসা ২টি বিদ্যালয়ের কয়েক ছাত্র ছাত্রী ভ্যানযোগে দোখলা হতে লহুরিয়া চিড়িয়াখানা আসার পথে ছিনতাইকারির কবলে পড়ে। ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে পিকনিক স্পটে যাওয়ার জঙ্গলাকীর্ণ এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া একটি সঙ্গবদ্ধ দল প্রতিনিয়তই দুষ্কর্ম করে বেড়াচ্ছে। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জলছত্র থেকে রসুলপুর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা পুলিশী পাহারায় যানবাহন পারাপার করা হয়। কিন্তু রসুলপুর-দোখলা সড়কে কোন পাহারার ব্যবস্থা না থাকায় এটি চোর-ডাকাতের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। বর্তমানে পচিশ মাইল-দোখলা সড়কের মাধ্যমে পিকনিক স্পটগুলোতে যাতায়াতের কাজ চলছে।
মধুপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আমিরুল ইসলাম দেওয়ান জানান, রসুলপুর-দোখলা সড়কে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনার কোন অভিযোগ পাননি। তাছাড়া লোকবলের অভাবে ঐ সড়কে পুলিশী পাহারার ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। বনবিভাগ আমাকে ভ্রমন পিপাষুদের নিরাপত্তার জন্য কখনো অবহিত করেনি। তবে এখন থেকে শুক্র ও শনিবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহরিয়ার সিফাত/টাঙ্গাইল