সুইডেনের ‘এস্কিলসতুনা’ শহরে লেখক নাজমুন নাহার

নাজমুন নাহার :: সুইডেনের ‘এস্কিলসতুনা’ শহর। এই শহরের সূর্যোদয় এখন ভোর সাড়ে পাঁচটায়। গ্রীষ্মের আগমনে ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে দিনের আলো। ২১ দিন পর আজ (২৮ মার্চ) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে খুব ভোরে আমি হাঁটতে বের হলাম। এমন শূন্যতা আমি এর আগে দেখিনি। আমার ঘর থেকে পাঁচ সাত মিনিটের দূরত্বে সবকিছু।

অনেকদিন পর এই শূন্যতার মাঝে ভোরের জ্বলজ্বলে রোদ উঠা জনমানবহীন এই শহরের সকালটা কেমন যেন ভিন্ন লাগছিল। কোথাও কেউ নেই, আমার দুটি পায়ের শব্দ আমি নিজেই যেন শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি ভীষণ জোরে জোরে পা ফেলছিলাম, কেউ যেন আমার পিছে পিছে না আসে, কেউ যেন আমাকে না দেখে, কারোর স্পর্শ, কারোর চাহনি কোন কিছুই যেন আমি অনুভব না করি প্রকৃতির এই নিস্তব্ধতা ছাড়া।

বাতাসের শুনশান শব্দ সবকিছুর মাঝে আমি ছিলাম এক অচেনা মানুষ। আমি যেন আমাকে নিজেই চিনতে পারছিনা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলাম কয়েকবার। তারপর কিছুক্ষণ খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্যের উত্তাপ চোখেমুখে, শরীরের প্রতিটি লোমকুপের ভেতর নিতে নিতে হারিয়েছিলাম শূন্য থেকে মহাশূন্যে, দিগন্তে- দিগন্তে।

শহরের ছোট রাস্তা, পার্ক ছাড়িয়ে হঠাৎ করেই লেকের পাড়ে এসে দেখতে পেলাম প্রচুর পাখি কিচিরমিচির করছে। এমন স্নিগ্ধ ভোর আমার কাছে একটু অচেনা। এর আগে আমি বহু বার এসেছি হাঁটার জন্য, কিন্তু আজকে সকালের মত এত জনমানবহীন শহরের লেকের পাড়ে এত এত পাখি কখনো দেখিনি। পাখিগুলো একটু পর পরই উড়ে যাচ্ছিল আবার ফিরে আসছিল খেলা করছিল লেকের পাড় পর্যন্ত। ছোট্ট কিউট শহরটাটা দেখে মনে হলো যেন কেউ এক খন্ড ছবি এঁকে দিয়েছে যত্ন করে।

ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত হেঁটে আবার বাসায় ফিরে এলাম। তখন পক্ষী ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পাইনি। গত কয়েকদিনে বদলে যাওয়া পৃথিবী আমাদেরকে শিখিয়ে দিলো বেঁচে থাকার জন্য কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়। প্রকৃতির প্রতি কতটা যত্নশীল হতে হয়।

 

 

 

 

 

লেখক: বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী ভ্রমণ কণ্যা । 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here