তিতুমীর প্রতিনিধি:: “একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন”, এই শ্লোগানকে কেন্দ্র করে তিতুমীর কলেজ বাঁধন ইউনিট ২০২০ সালে ১০৯২ ব্যাগ রক্ত যোগার করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয় নতুন রক্তদাতা হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২৭৭জন।

রক্তদানের উল্লেখ্য সংগঠনটি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা নিয়েও কাজ করেছে। রক্তদাতা সংকটের সাথে লকডাউনের সময় রক্তদাতাদের যাতায়াতে নানা বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অধিকাংশ রক্তদাতা পুলিশের বাঁধার যেরে রক্ত দিতে যেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

তবুও সকল বাঁধা-বিপত্তি অতিক্রম করে, কলেজের বাঁধনকর্মীরা রক্ত বা প্লাজমা নিয়ে রোগির কাছে হাজির হয়েছেন। উল্লেখিত, জনকল্যাণমূলক কাজে কেউ কেউ কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এ বছর সর্বোচ্চ রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। এ মাসে ১৭৯ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে সংগঠনটি। এছাড়া ১৪০, ১২৭, ১২৫, ১১০ ও ১০৪ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছে যথাক্রমে , জানুয়ারি, মার্চ, অক্টোবর , নভেম্বর , ডিসেম্বর ও মাসে। তবে করোনায় স্থবিরতা থাকায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রক্তের যোগান তুলনামূলক কম হয়েছে।

তাছাড়া গতবছরের তুলনায় এবছর করোনার জেরে নতুন রক্তদাতা ও রক্ত সংগ্রহ দুটোই কম ছিল। ২০১৯ সালে রক্ত সংগ্রহের পরিমান ছিল ১৫৭৭ ব্যাগ, যা ২০২০ সালে সংগ্রহিত রক্তের তুলনায় ৪৮৫ ব্যাগ বেশি। নতুন রক্তদাতা ছিল ৭৭১ জন, যা এ বছর হতে ৪৯৪ জন বেশি।

বাঁধন, তিতুমীর কলেজ ইউনিটের সহ-সভাপতি আফরোজা আক্তার তন্বী জানান, “লকডাউন যখন কড়াকড়িভাবে শুরু হয়, তখন রক্ত সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অধিকাংশ কর্মী এবং ডোনাররা গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়ার কারণে এপ্রিল এবং জুনে রক্তদাতা পেতে সমস্যা হতো। সেই সাথে করোনা আতঙ্কের জন্য অনেকে ঢাকা থাকলেও রক্ত দিতে হাসপাতালে যেতে চাইত না। এছাড়া মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি হতো যে ডোনার রক্ত দিতে যাওয়ার সময় রাস্তায় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। করোনা কালে এমন নানান বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। ”

তিনি আরও বলেন, “অনলাইন কাউন্সিলিং এবং রক্ত দেয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনলাইনে ব্যাপক ক্যাম্পেইন এর কারণে ধীরে ধীরে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়। যাবতীয় কাজ অনলাইনেই করতে হতো। এ বছর বাঁধন সরকারি তিতুমীর কলেজ ইউনিট থেকে ১০৯২ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে নতুন রক্তদাতা ছিল ২৭৭ জন। করোনার সময় রক্তদানের পাশাপাশি আমরা প্লাজমা দান নিয়েও কাজ করেছি।”

বাঁধন, তিতুমীর কলেজ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হাসান জানান, “বাঁধন সরকারি তিতুমীর কলেজ ইউনিটের সকল কর্মীদের নিয়ে আমি গর্বিত। কেননা এই করোনার সময়ে ও অনেক ঝুঁকি নিয়ে তারা ডোনার সাথে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছে। যে কারণে এমন সংকটেও এত ব্লাড ম্যানেজ করা সম্ভব হয়েছে । এছাড়া ও ওই সকল ডোনার ও শুভাকাঙ্খীদের জানাচ্ছি শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে জীবন ফিরে পায় অন্য কেউ। ”

তিনি আরও বলেন, “সর্বোপরি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা স্বপ্ন দেখি সেই দিনের, যে দিন দেশের সকল মানুষ তার রক্তের গ্রুপ জানবে এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসবে।”

উল্লেখ্য, স্বেচ্ছায় রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালের ৯ই মে তিতুমীর কলেজে বাঁধনের অঙ্গ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অসম্ভব প্রাণশক্তি নিয়ে মুমূর্ষের জন্য রক্তের প্রয়োজনে নিরলস খেটে যাচ্ছে অজস্র কর্মী । তারই পরিশ্রমের ফসল হিসেবে আজকের এই অর্জন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here