স্টাফ রিপোর্টার :: তামাকজনিত ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ। শুধু তামাক ব্যবহারজনিত আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হয়, যা দেশের মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
শনিবার ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত তামাকের অর্থনৈতিক ক্ষতিবিষয়ক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে।
গবেষণায় বলা হয়, যারা তামাক ব্যবহার করেন না, তাদের চেয়ে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে তামাকজনিত প্রধান সাতটি রোগের একটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি। বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের অধিক প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ তামাক সেবনের কারণে এবং ৬১ হাজারের অধিক শিশু পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
গবেষণায় আরও বলা হয়, তামাকের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। দেশের অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ দুই কোটি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া তামাক চাষের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, তামাক চাষে দুর্লভ কৃষিজমি ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি, অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা বৃদ্ধি ও ক্ষতি এবং পরিবেশদূষণ হচ্ছে। তবে তামাক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের প্রকৃত ভোগান্তি পরিমাপ করা সম্ভব নয়।
ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী হলে দিনব্যাপী গবেষণার ফল উপস্থাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কারিগরি অধিবেশন, গ্রুপভিত্তিক আলোচনাসহ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তামাক গ্রহণের কারণে অসংক্রামক সাতটি রোগের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকিবিষয়ক একটি গবেষণাকর্মে ক্যান্সার সোসাইটির নেতৃত্বে ১০ হাজার বাড়িতে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। অন্যদের মধ্যে জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মালিক, স্বাস্থ্য সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলাম, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির পরিচালক অধ্যাপক ড. নিগার নারগিস ও গ্রেগ হাইফলে, ক্যান্সার রিসার্চ-ইউকের প্রিসিলা টিগা, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (যুগ্ম সচিব) মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মোল্লা ওবাদুল্লাহ বাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও সোসাইটির যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে বাংলাদেশ সরকারের যে শেয়ার রয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে।
স্বাস্থ্য সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এ ধরনের গবেষণা ও এর ফল আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।