রফিকুল ইসলাম ফুলাল, দিনাজপুর প্রতিনিধি :: দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে যত্রতত্র পুকুর খনন করার ফলে জমির পানি নিস্কাশন না হওয়ায়,কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকশ বিঘা জমির ধান পানির নিচে। আম্পান ও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের এখন দুর্বিসহ অবস্থা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে ধান। সেইসঙ্গে শ্রমিক সংকটে চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে। ফলে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা। কয়েকে দিনের ভারী বর্ষনে উপজেলার খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়ন এলাকার ১০টি গ্রামে নিম্নাঞ্চল প্লাবীত হয়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কয়েকেশ বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,উপজেলার খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ধানের জমি পানির নিচে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাকা ধান দিয়ে শিকড় বের হচ্ছে। কৃষকরা কোমর পানিতে নেমে ধান কাটছেন। আবার কেউ কেউ নৌকা ও কলার ভুরোয় যোগে ধান কেটে সড়কে নিয়ে এসে মাড়াই করছেন। আবার যেসব কৃষকের ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে তারা ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সোনার ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। অনেক কৃষক পুজিঁ হারানোর হতাশায় কাঁদছেন। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন সর্বনাশের মুখে। ওই এলাকায় উজান থেকে বয়ে আসা বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে খাল দিয়ে পাশের ছোটো যমুনা নদীতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র পানি নিস্কাশনের পথ রোধ করে পুকুর খনন করেছে। এতে পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন পানি নিস্কাশনের ব্যাবস্থা না থাকায় ভারী বর্ষনে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তার ৫ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে, একই ভাবে তলিয়ে গেছে তার ভাই হাফিজুর রহমান ও সিরাজুলের ধানও। বারাইপাড়া বাচ্চু মিয়া বলেন তার দেড় বিঘা জমি তলিয়ে গেছে, একই ভাবে তলিয়ে গেছে মহদীপুর গ্রামের রুহুল আমিন, আলম মিয়াসহ লালপুর, মহেষপুর পুর্ব নারায়নপুর কিসমতলালপুর গ্রামের প্রায় ১৫০ জন কৃষকের ধান।

কৃষকরা জানায় প্রাতি বিঘা জমিতে ৩০মন করে বোরো ধান উৎপাদন হলেও, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ভাগ ধানও তারা ঘরে তুলতে পারছেনা। কৃষকরা বলেন পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারনে ধান কাটার শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছেনা, এই কারনে প্রতিবিঘা জমিন ধান কাটতে তাদেরকে তিন হাজারের অধিক টাকা খরছ করতে হচ্ছে। এতেকরে তাদের মাথায় হাত পড়েছে।

খয়েরবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের মন্ডল বলেন গত কয়েক বছর থেকে পানি নিস্কাশনের পথ রোধ করে ঘোনাপাড়া মৌজায় পুকুর খনন করায়, খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের পুর্ব নারায়নপুর, লালপুর, মহদীপুর, মহেষপুর, কিসমত লালপুর উত্তর লক্ষিপুর,অ¤্রবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই ও বারাইপাড়া মৌজার প্রায় ২২শ বিঘার জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এই জমির মধ্যে বর্তমানের ৬০ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে, বাকি ৪০ ভাগ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই জন্য তিনি পানি নিস্কাশনের পথ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এটিএম হামিম আশরাফ বলেন বর্তমানে অনেক জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে, তিনি বলেন ওই এলাকায় ২০ ভাগ জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতেকরে ১০ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here