ফারুক আহমেদ

ফারুক আহমেদ :: একবার স্কুল জীবনে বাড়ির বিনা অনুমতিতেই কুতুবউদ্দিন গাজীর সঙ্গে চৈতালি প্রেক্ষাগৃহে শাহরুখ খানের “ডর” সিনেমা দেখতে যায় নাফিক। সেই থেকে সে শাহরুখ খানের ভক্ত।

একটি পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় শাহরুখ খানের জীবনী পড়ে অনুপ্রাণিত হয়।শাহরুখ খান স্কুল জীবন থেকেই খেলাধুলা ও পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু নাফিক এর কোনটাতেই ভালো না।তবুও স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে সব খেলায় শেষ দিক থেকে প্রথম হয়েছিল।এতে অনেকেই হাসাহাসি করেছিল,সেও লজ্জা পেয়েছিল।

তারপর মায়ের পরামর্শ মত নিয়মিত অনুশীলন করে পরের বছর দৌড়ে প্রথম হলো।তখন মনে মনে একটা জেদ চেপেছিল নাফিকের, ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।

নাফিকদের স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়ে বোদরা হাইস্কুলে।নাফিক যখন ক্লাস নাইনে,তখন তার দাদা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। নাফিক তা দেখতে একদিন বোদরা হাইস্কুলে উপস্থিত হলো।

আম বাগানের ফাঁক দিয়ে এক জোড়া চোখের দেখতে পেল। যেন সে স্বপ্ন দেখছে…

স্বপ্নের পরীর মতো অপূর্ব সুন্দরী রাজকন্যা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। গেটের মুখে দাঁড়িয়ে-থাকা নাফিক তা দেখে চমকে ওঠে। তার বিনুনী করা চুলের প্রতিটি খাঁজে খাঁজে অফুরন্ত প্রেম।নাফিকের চোখ পড়লো যখন তার চোখে, তখন নাফিকের মনে ভালোবাসার মেঘ জমে ওঠে।তারপর থেকেই সে খুঁজে ফিরে ওই মায়াবী চোখের ইশারা…

নাফিকের একটা ভাঙা-চোরা সাইকেল। গায়ে ঘটকপুকুর চৌমাথার ফুটপাত থেকে কেনা সবুজ রঙের গোলগলা গেঞ্জি। স্কুল যাওয়ার জন্য একটিমাত্র প্যান্ট।বাড়িতে ভাঙা টালির ছাউনি দিয়ে বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর।সে বাবা-মাকে নতুন আকাশের দেখায়।অদম্য ইচ্ছায় সে স্কুল জীবনে দু’টো পরীক্ষাতেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে।

অন্য দিকে ভালোবাসার জন্য কিছু করার জেদ। একদিন সে ভালোবাসার সামনে দাঁড়িয়ে সব মনের কথা খুলে বলবে।

কলেজ জীবন শেষ করে সে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সেক্রেটারি পদে কাজ শুরু করেছে।জীবনে চলার পথে জুটেছে কত তাচ্ছিল্যের শেল, কত যন্ত্রণা।অবজ্ঞার পাহাড় মাথায় নিয়ে আজও পবিত্র ভালোবাসার অপেক্ষায় প্রহর গুনে গুনে রাত কাটে নাফিকের।জীবনের খোলা জানালায় কত মুখ আর মুখের মিছিল।তবুও তাকে না পাওয়ায় খাদহীন প্রেম টলমল করে নাফিকের বুকে।

আবারও নাফিকের অগ্নিশপথ। নতুন করে বাঁচার লড়াই করবে। এবার নাফিক শাহরুখ খানের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে ভর্তি হল স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বসন্তপুরে চাকরি করতে করতে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্য ও ইতিহাস বিভাগে এমএ পাশ করে নাফিক। নিষ্ঠার সঙ্গে বসন্তপুর এডুকেশন সোসাইটির সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার কাজে মন দেয়। নাফিকের উদ্যোগেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফুলে ফেঁপে উঠে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে মডেল স্কুল ও এডুকেশন কলেজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। সে সব অতীত ইতিহাস মনে পড়ে আজও।

লিচু ফুলে মৌমাছি তখনও খুঁজে ফিরছে মধু। অস্থির চোখ দেখি ঘড়ির চঞ্চল কাঁটা ঘুরে ঘুরে কখন হয়েছে সময়ের নদী। রাজকন্যা তুমি যেন নদীর গুঞ্জরণে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আপন মনে গাইছো প্রেমের গান, কল্যাণপুর ষ্টেশনে।ভালোবাসার আসমান জুড়ে এ কোন ছবি? কার ছবি? বেলা অবেলায় এ কোন আত্মশুদ্ধি?

একবার একগুচ্ছ লাল গোলাপ ছাড়াই জানিয়ে ছিলাম ‘একুশের বাংলা ভাষায়’, ভালোবাসি তোমায়।পরীর মতো রাজকন্যা তখন তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে, নির্বাক! আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজছো শিমুল পলাশের মাঝে ভালোবাসার রঙ।

প্রিয়া, মনে পড়ে ২৯ জুলাই! তোমার জন্য, বাঁচার জন্য, এ বুকে আজও ভালোবাসার আকাশ রাখা। ভালোবাসার জন্য বাঁচো, বাঁচার মতো বাঁচো। অনন্ত ভালবাসা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখের ইশারায় ডাকছো আমায়। আমাদের ভালোবাসার একটা চুম্বন অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে কখন অপেক্ষালয় হয়েছে জানা হয়নি। এই চোখের দিকে তাকাও। অফুরন্ত সৃষ্টি খেলা করে যে চোখে। তাঁকে  মেরো না, ওকে বাঁচতে দাও।

চেয়ে নাও…মিত্রতা-ভালোবাসা-মনুষ্যত্ব-মানুষ। অবাঞ্ছিত ভেবে ঘৃণা করো না। জেনো অবাঞ্ছিত শুঁয়োপোকা আজও প্রজাপতি হয়।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here