মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুরবাসীর কাছে জ্বলজ্বলে স্মৃতি বিজড়িত একটি দিন ৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর। এই দিনে ফরিদপুর শহরতলীর করিমপুরের (ধোপাডাঙ্গা চাঁদপুর) যুদ্ধ ফরিদপুর বাসীর স্মৃতিতে অমস্নান এক ইতিহাস।
৭১ সালের ৯ ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে হানাদার পাক বাহিনীর একটি জিপ গাড়ী ও একটি ট্রাক ফরিদপুর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার পশ্চিমে ধোপাডাঙ্গা চাঁদপুরের দিকে এগিয়ে আসছে। জিপে ৫-৬ জন পাক আর্মি অফিসার রয়েছে এবং ট্রাকে করে ঐ এলাকার অবস্থানকারী রাজাকারদের জন্য চাউল-আটা ও অন্যান্য রসদ এবং অস্ত্র আনা হচ্ছে বলে খবর আসে। ফরিদপুর শহর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় দল দুভাগে বিভক্ত হয়ে তিনটি গ্রুপে পাক সেনাদের প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অপর দিকে বোয়ালমারীর নতুবদিয়া ক্যাম্প থেকে হেমায়েতউদ্দীন তালুকদার (বর্তমানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান) এর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ এবং গোরদিয়া ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াসের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পাক হানাদার বাহিনীর ও রাজাকারদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে।
৬ ডিসেম্বর যশোরের স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ে, যশোর থেকে যৌথ বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে পাক হানাদার বাহিনী কামারখালী ঘাট পার হয়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। এসময় কাজী সালাউদ্দীন যশোর রোডে করিমপুর এলাকায় পাক সেনাদের একটি গাড়ীতে গ্রেনেড চার্চ করে উড়িয়ে দেয়। এঘটনায় ওয়ারলেস্ বার্তার মাধ্যমে যশোর থেকে পালিয়ে আসা পাক সেনা বাহিনীর গাড়ীর লম্বা বহর করিমপুর এলাকায় আসতে থাকে। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে এলএমজি নিয়ে বীরের মতো যুদ্ধ করে বেশ কয়েকজন পাক সেনাকে হত্যা করে কাজী সালাউদ্দীনসহ শাহাদত বরণ করেন মেজবাউদ্দীন নওফেল, আব্দুল ওহাব, সামসুদ্দীন আহম্মেদ, মইনুদ্দীন, আব্দুল হামিদ ও মুজিবুর রহমান। এসময় আরো ৫ গ্রামবাসী শহীদ হন।
যুদ্ধশেষে পর দিন ১০ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজারকারদের সহযোগিতায় করিমপুর এলাকার বাড়ীঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুর স্বাধীন হলে করিমপুর থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের হাড়-গোড় সংগ্রহ করে শহরের আলীপুর কবরস্থানে যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/বিভাস দত্ত/ফরিদপুর