মোঃ সফিকুল আলম দোলন, জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড় ::
পর্যটন মৌসুম উপলক্ষ্যে পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বুধবার (২৫ অক্টোবর)থেকে জেলার তেঁতুলিয়ায় পর্যটন স্পট ডাকবাংলোয় শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। ‘আলোকচিত্র প্রদর্শনী অপরূপা পঞ্চগড়’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ। এতে শোভা পাচ্ছে পঞ্চগড় জেলার প্রাণ-প্রকৃতি, পশু-পাখি ও পর্যটন স্পটের ছবি।
বর্তমানে তেঁতুলিয়া থেকে খালি চোখে দেখা মিলছে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এই উপলক্ষ্যে পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা পর্যটকদের কাছে বাড়তি পাওনা এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফিরোজ আল সাবাহর ক্যামেরায় তোলা পঞ্চগড়ের ভূ-প্রকৃতি, গ্রামীণ সৌন্দর্য ও বন্যজীবনের ছবি। কাঞ্চনজঙ্ঘা, বাঘ, পাখি, সাপ, চা বাগান, লালসোনা মরিচসহ বিভিন্ন আলোকচিত্র।
ফিরোজ আল সাবাহর জন্ম পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজো। পড়ালেখা করেছেন
ডিপ্লোমা কম্পিউটার প্রকৌশলে। শৈশবে ফিল্ম ক্যামেরা দিয়েই শুরু করেন ফটোগ্রাফি। পরে বাবার কাছ থেকে ল্যাপটপ কেনার টাকা নিয়ে কেনেন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা। ফটোগ্রাফিই হয়ে উঠে তার ধ্যানজ্ঞান। ছবির নেশা ও পেশায় দেশ-বিদেশ চষে বেড়ালেও ফটোগ্রাফি জীবনের শুরু থেকে বেশির ভাগ সময় কেটেছে পঞ্চগড়ে। এই সময়ে ছবি তোলার নেশায় ঘুরেছেন দেশের ৪০ জেলা। চিতাবাঘ, অতিকায় পাখি চিতিঠোঁট
গগনবেড়া, মদনটাক, বার্মিজ অজগর, মহা বিপন্ন পাখি শেখ ফরিদ ছাড়াও আরও বিভিন্ন দুর্লভ বন্যপ্রাণী ও প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখির ছবি ক্যামেরাবন্দী করেছেন তিনি।
শখের ফটোগ্রাফি থেকে এখন পেশাদার ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেছেন ফিরোজ আল সাবাহ। ফটোগ্রাফির পাশাপাশি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছেন তিনি। ফিরোজ আল সাবাহ ফটোগ্রাফির জন্য পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারসহ আরও বেশকিছু পুরস্কার। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অবদানে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। তার অসংখ্য ছবি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণামাধ্যমে।
বর্তমানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কনট্রিবিউটর ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁও থেকে আসা কয়েকজন শিক্ষার্থী পর্যটক বলেন, আমরা তেঁতুলিয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছিলাম। ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। এখানে পরিচিত ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ ভাইয়ের
আয়োজনে অপরূপা পঞ্চগড় ছবি প্রদর্শনী দেখে আরও ভালো লাগছে।
তারা আরও বলেন, আমরা ফেসবুকে ফিরোজ আল সাবাহকে ফলো করি, তার ছবি দেখে খুব ভালো লাগে।
এখানে অপরূপা পঞ্চগড় ছবি প্রদর্শনীতে ছবিগুলোn দেখে সত্যিই আপ্লুত হয়েছি।
মো. রেজাউল রেজা নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক বলেন, পর্যটন স্পট ডাকবাংলোয় চিত্র
প্রদর্শনী আয়োজন করায় আমরা আনন্দিত। এ চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের সবাই পঞ্চগড় সম্পর্কে
ইতিবাচক ধারণা পাবে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও কাজে দেবে এই প্রদর্শনী।
প্রদর্শনী দেখতে আসা স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড় জেলার সৌন্দর্য, সুন্দর প্রকৃতির ছবি এ প্রদর্শনীতে দেখে আমি মুগ্ধ।
ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজের জন্মভূমিকে নিয়ে ছবি প্রদর্শনী আয়োজন করতে পারাটা অনেক আনন্দের। ফটোগ্রাফি জীবনে আমি নিজের জেলার জীবনযাপনের ছবিই বেশি তুলেছি। ছবি তুলতে গিয়ে পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সাথে আমার পরিচয়। তখন থেকেই সারা দেশের মানুষের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চেষ্টা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমার লক্ষ্য পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়াকে পর্যটনে উন্নত করা। এই এলাকার সৌন্দর্যকে আরও
বেশি মানুষের কাছে তুলে ধরা। ফটোগ্রাফির মাধ্যমেই পঞ্চগড়কে অপরূপা পঞ্চগড় হিসেবে পর্যটন শিল্পে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখছি।